অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট যশোরের ভৈরব নদের গলা চেপে ধরেছে। নদ খননের কার্যক্রম ঢিমেতালে চললেও অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট অপসারণ উদ্যোগের গতি নেই।
সোমবার (১৫ মার্চ) অপরিকল্পিত এসব ব্রিজ-কালভার্ট অপসারণসহ তৃতীয় দফায় বৃদ্ধি করা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খনন কাজ সম্পন্ন করার দাবিতে প্রেস মিটের আয়োজন করে ‘জনউদ্যোগ’নামে একটি সংগঠন।
এ সময় যশোরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমদ, প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুন উদ্দৌলাহ্, অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, মাহবুবুর রহমান মজনু, সুরাইয়া শরীফ, আইডি যশোরের ব্যবস্থাপক বিথিকা সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরবাসীর লাগাতর আন্দোলনের কারণে সরকার ভৈরব নদ সংস্কারে প্রকল্প হাতে নেয়। নদটি সংস্কারে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর ২০১৬ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। শুরু হয় পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’। এ প্রকল্পের আওতায় ৯২ কিলোমিটার নদ খনন করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে নদের উজান ও ভাটির ৭০ কিলোমিটারের বেশি কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। জটিলতা চলছে শহরের দড়াটানা অংশের কাজ নিয়ে। ভৈরব নদ খননের কাঠেরপুল থেকে বিরামপুর অংশের চার কিলোমিটার নিয়ে শুরু থেকেই বিপাকে পড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
এ খনন কাজ শুরুর তারিখ ছিল গত বছরের ৬ আগস্ট ও কাজ শেষ হবার তারিখ বেঁধে দেয়া হয়েছিল ২০২০ সালের ২০ জুন। কিন্তু দৃশ্যমান তেমন কোন কাজ হয়নি। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ফের বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের (২০২১) জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তারপরও এ খনন কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয় দফায় ভৈরব নদ খননের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিলেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাকালে ভৈরব নদ খনন কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে খননকাজে অবহেলা ও সময় ক্ষেপণের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং কার্যাদেশ বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া ভৈরব নদ খননের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।’
এদিকে নদ খননকাজ ঢিমেতালে চললেও অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট অপসারণ উদ্যোগের গতি নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট ভৈরব নদের গলা চেপে ধরেছে। এর মধ্যে যশোর সদরে রয়েছে ৩৪টি, চৌগাছা উপজেলায় ১৬টি এবং ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় একটি। বর্তমানে ম্যাপ অনুযায়ী নদের প্রস্থ শহরে ১৫০ মিটার এবং শহরের বাইরে ৩০০ মিটার রয়েছে। কিন্তু ব্রিজ-কালভার্ট করা হয়েছে ১২ থেকে ৭০ মিটার। এতে নদীর গতিপথ যেমন কমেছে তেমনি দখল ও দূষণ চলেছে সমানতালে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্টের কারণে ব্যাহত হচ্ছে খননকাজও।
এবিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ভৈরব নদে ৫১টি অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৯টি অপসারণ করা জরুরি। তা না হলে ভৈরব খননের যে সুফল তা পুরোপুরি পাওয়া যাবে না। তবে এ ব্রিজ-কালভার্টগুলো সওজ, এলজিইডি ও ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে সংশ্লিষ্টদেরকে এগুলো অপসারণের জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।’
নদী বন্দর / পিকে