সরকারের সবগুলো সেবা ই-সেবায় রূপান্তর করা হবে। সেবাগুলো জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো স্থাপন করে সারা দেশের ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হবে। ‘ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়ন হলে গ্রামের মানুষও ঘরে বসে সরকারের সবগুলো সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পটি অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে আইসিটি অধিদফতর। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে খরচ হবে ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। তার মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে ২ হাজার ৫০৫ কোটি ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা আর চীন সরকারের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া হবে ৩ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রমগুলো হলো ১ লাখ ৯ হাজার ২৪৪টি ব্রডব্র্যান্ড এন্ড ইউজার কানেক্টিভিটি স্থাপন, ১০ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, ৫৭টি বিশেষায়িত ল্যাব, সেন্ট্রাল ক্লাউড প্লাটফর্ম ও ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপন, জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্সে আইটি অবকাঠামোসহ LAN, NOC (Network Operations Center), প্রশিক্ষণ সুবিধাদি, ৫৫৫টি DSET (Digital Service & Employment Training Center), মাঠ পর্যায়ের ক্লাউড ফাইল সার্ভিস এবং ডিজিটাল স্টোরেজের জন্য কেন্দ্রীয় সার্ভার অবকাঠামো স্থাপন করা।
আইসিটি ল্যাব, স্মার্ট ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং ডিসটেন্স লার্নিং প্ল্যাটফর্মসহ প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো সুবিধা সম্বলিত একটি ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন, CRVS (Civil Registration and Vital Statistics) বাস্তবায়নের জন্য CRVS Central ISDP সার্ভার স্থাপন করা।
মাঠ পর্যায়ে ৫ হাজার ৫০০টি এনরোলমেন্ট অবকাঠামো স্থাপন এবং ১৭ হাজার ৩১৪টি Service Delivery Device বিতরণ করা।
১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশন স্থাপন, ৪৯২টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, একটি ২১ তলা বিশিষ্ট ‘DoICT Tower’ নির্মাণ, ৪৯১টি উপজেলা শেয়ারড আইসিটি অপারেশন সেন্টারের জন্য উপজেলা বিল্ডিংয়ের একতলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশনের আওতায় মাঠ পর্যায়ে জরিপ এবং ২০ হাজার জন কৃষককে স্মার্ট সেন্সর ডিভাইস প্রদান করা।
৬টি (২টি জীপ, ২টি মাইক্রোবাস, ২টি ডাবল কেবিন পিকআপ) মোটরযান কেনা, ২৮ ক্যাটাগরির পরামর্শক সেবা কেনা, কম্পিউটার এক্সেসরিজ এবং সফটওয়্যার সংগ্রহ করা, ১০২টি অফিস ইকুইপমেন্ট, ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২টি ফার্নিচার সংগ্রহ, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ (বৈদেশিক ভেন্যু: ৪০ জন এবং বাংলাদেশ ভেন্যু: ৩ হাজার ৩৩৫ জন), ১৬ হাজার ৮২১ জনের স্থানীয় প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কনফারেন্স আয়োজন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ৪৯ জন জনবল নিয়োগ ইত্যাদি।
প্রকল্পটি একনেককে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেছেন, ‘প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হলো সরকারের সেবাগুলোকে ই-সেবায় রূপান্তর করে জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দেয়া। তাছাড়া ডিজিটাল শিক্ষার সম্প্রসারণ ও সহজলভ্যকরণের মাধ্যমে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের আইসিটি ক্ষেত্রে দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। ডিজিটাল বিভক্তি দূর করা, সব পর্যায়ে আইসিটির ব্যবহার সহজ করা, দেশব্যাপী আইসিটির সহজগম্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শতভাগ ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন রেট নিশ্চিত করা। সরকারের সব পর্যায়ে সুশাসন নিশ্চিত করা, আইসিটির নিত্যনতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন করা। এই লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে বিধায় সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।’
নদী বন্দর / জিকে