যশোরে ভৈরব নদের অংশে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হয়েছে ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট। অবৈধভাবে নদ দখল ও ভরাট করে এসব ব্রিজ কালভার্ট স্থাপন করা হয়। এদিকে নদের নাব্যতা বৃদ্ধি ও দখলমুক্ত করতে যশোর অংশে খননকাজ চলছে। তবে এ কাজের গতি অত্যন্ত স্লথ। অপরিকল্পিত অর্ধশত ব্রিজ-কালভার্ট অপসারণের দৃশ্যমান অগ্রগতিও নেই।
উপরন্তু যথাসময়ে নদ খননকার্য সম্পন্ন সম্ভব না হওয়ায় সময়সীমা আরো এক বছর বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যশোরবাসী বর্ধিত সময়ের মধ্যে হলেও এ খননকার্য সম্পন্ন ও ব্রিজ-কালভার্ট অপসারণ দেখতে চায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সংস্কৃতি, জনসাধারণের জীবন ও জীবিকা, চলাচল ও যোগাযোগ, কৃষি ও শিল্প, মৎস্যজীবিকা, ব্যবসা ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, গঠন, পরিবর্ধন ও বিস্তারে ভৈরব নদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এ নদ যশোরের ঐতিহ্য।যশোরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বহতা ভৈরব নদ। আর এ ঐতিহ্য রক্ষার্থে দাবি বাস্তবায়নে যশোরবাসী দীর্ঘদিন ভৈরব নদ সংস্কারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে।
যশোরবাসীর লাগাতর আন্দোলনের কারণে সরকার ভৈরব নদ সংস্কারে প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৬ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। শুরু হয় পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’। এ প্রকল্পের আওতায় ৯২ কিলোমিটার নদ খনন করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে নদের উজান ও ভাটির ৭০ কিলোমিটারের বেশি কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। জটিলতা চলছে শহরের দড়াটানা অংশের কাজ নিয়ে। ভৈরব নদ খননের কাঠেরপুল থেকে বিরামপুর অংশের চার কিলোমিটার নিয়ে শুরু থেকেই বিপাকে পড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
এ খননকাজ শুরুর তারিখ ছিল গত বছরের ৬ আগস্ট। কাজ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল ২০২০ সালের ২০ জুন। কিন্তু দৃশ্যমান তেমন কোনো কাজই হয়নি। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তার পরও এ খননকাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয় দফায় ভৈরব নদ খননের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিলের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে ভৈরব নদের খননকাজ ব্যাহত হয়েছে। তবে খননকাজে অবহেলা ও সময়ক্ষেপণের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং কার্যাদেশ বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া ভৈরব নদ খননের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ খননকাজে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।
এদিকে নদ খননকাজ ঢিমেতালে চললেও অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট অপসারণ উদ্যোগের গতি নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট ভৈরব নদের গলা চেপে ধরেছে। এর মধ্যে যশোর সদরে রয়েছে ৩৪টি, চৌগাছা উপজেলায় ১৬টি এবং ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় একটি।
বর্তমানে ম্যাপ অনুযায়ী নদের প্রস্থ শহরে ১৫০ মিটার এবং শহরের বাইরে ৩০০ মিটার। কিন্তু ব্রিজ কালভার্ট করা হয়েছে ১২ থেকে ৭০ মিটার পর্যন্ত। এতে নদীর গতিপথ যেমন পাল্টেছে, তেমনি দখল ও দূষণ হয়েছে সমানতালে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্টের কারণে ব্যাহত হচ্ছে খননকাজও।
এ বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ভৈরব নদে ৫১টি অপরিকল্পিত ব্রিজ কালভার্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৯টি অপসারণ করা জরুরি। তা না হলে ভৈরব খননের যে সুফল তা পুরোপুরি পাওয়া যাবে না। তবে এ ব্রিজ কালভার্টগুলো সওজ, এলজিইডি ও ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্টদের এগুলো অপসারণের জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
নদী বন্দর / জিকে