দূর থেকে মনে হয় সাদা রঙের বিছানা চাদর বিছানো। যা সাধারণ কোনো ফুল নয়। এটি পেঁয়াজ বীজের সাদা কদম। মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছেপেঁয়াজ বীজের ফুল। এই সাদা ফুলের কদমের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে কালো সোনা।
পেঁয়াজ ফুলের কদমের মধ্যে জড়িয়ে আছে ফরিদপুরের কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। শুধু তাই নয়, দেশজুড়ে পেঁয়াজচাষিদের স্বপ্ন দেখায় তারা।দেশের চাহিদা মিটানোর পর পেঁয়াজ বীজ বিদেশে রফতানি সম্ভব বলেও তারা মনে করেন। এতে শুধু দরকার সরকারি সহযোগিতা।
চাষিদের সূত্রমতে, সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশিপেঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হয় ফরিদপুর জেলায়। গত মৌসুমের মতো এবারও ন্যায্য মূল্য পেলে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বীজ বিক্রয় করতে পারবেন তারা।
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের পেঁয়াজের বীজের জন্য সুখ্যাতি রয়েছে ফরিদপুরের। আর তাই ফরিদপুরের ৯টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলার কৃষকের মাঠে ১৭শ ১১ হেক্টর জমিতে এখন এমনই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
তাহিরপুরী/বারী-১ এবং থেকে লাগানো এই পেঁয়াজ আবারো মাঠ থেকে বীজ হয়ে কৃষকের ঘরে আসবে মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই। এই মৌসুমে এক হাজার ৫৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করতে পারবে তারা। যা সরকারি সংগৃহীত পেঁয়াজের বীজের দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৭০ ভাগই সরবরাহ করে ফরিদপুরের কৃষকরা।
এ বছর সদর উপজেলা ছাড়াও ভাঙ্গা, নগরকান্দা,সালথাসহ ৯টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লাল তীর কিং, তাহেরপুরী, সুখসাগর, নাসিক কিং, বারি-১, বারি-৪ জাতের পেঁয়াজের বীজ আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরও পেঁয়াজ বীজ আবাদে লাভবান হবেন বলে মনে করছেন চাষিরা।
পেঁয়াজ বীজ চাষে দেশসেরা কৃষাণির পুরস্কার পাওয়া ফরিদপুরের অম্বিকাপুরের সাহিদা বেগম জানান, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করে আসছেন। সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে থাকেন তিনি।
গত বছর তিনি প্রায় ৪ কোটি টাকার বীজ বিক্রি করেছেন বলে জানান। এ বছর অধিক জমিতে বীজের আবাদ করেছেন। এ বছর ৫ কোটি টাকার বীজ বিক্রির আশা করছেন এ কৃষাণি। তার দেখাদেখি অনেক নারীই এখন পেঁয়াজ বীজ আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন।
ফরিদপুরের অম্বিকারপুর ইউনিয়নের গোবিন্দুপুরের লাভলি- ইমতিয়াজ মোল্লা দম্পতি গত এক যুগ আগে ২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করে। বর্তমানে এই দম্পতির আবাদি জমির পরিমাণ ৩০ বিঘা। পরিবারের রয়েছে এক সন্তান রিফাত । সেও পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবারের পেঁয়াজ বীজের খেতে কাজ করে।
তাদের আশা গত মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে বীজের চাষ করে আয় করেছে কোটি টাকার মতো। এবার আবহাওয়া ঠিক থাকলে তাদের ৩০ বিঘা জমিতে ৯০ মণ বীজ উৎপাদন হবে। গত বছরের হিসাবে এবার মূল্য পেলে কমপক্ষে দুই কোটি টাকার বীজ বিক্রয় করতে পারবেন তারা।
সালথার উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষি মো. নাছির হোসেন বলেন, এলাকার অনেক বেকার যুবক এখন বীজের চাষ করছে। যার অল্প জমি রয়েছে সেও তার জমিতে পেঁয়াজের বীজের চাষ করছে । চলতি মৌসুতে সবার খেত ভালো হয়েছে ।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হয়রত আলী জানান, এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে চাষিরা অধিক মুনাফা করে এই কারণে এই ফসলকে কালো সোনা হিসাবে অভিহিত করা হয়। এই মৌসুমে অন্য বারের তুলনায় ভালো উৎপাদন হবে।
তিনি আরো বলেন, পেঁয়াজ বীজ আবাদে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফরিদপুর জেলায় এ বছর ১ হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতেপেঁয়াজ বীজ আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ১ হাজার ২৬ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে,একযুগ ধরেই পেঁয়াজের বীজের যে চাষ করছেন ফরিদপুরের কৃষক যা দেশের ৭০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে। তাই পেঁয়াজের বীজের চাষ ফরিদপুরে অব্যহত রাখতে সরকারের আরও পৃষ্ঠপোষকতা আশা করছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, বর্তমান সরকার, কৃষিবান্ধব সরকার। আগামী তিন বছরের মধ্যে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো। আমরা আমাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই নিজেদের চাহিদা পূরণ করব।
নদী বন্দর / জিকে