নওগাঁর মান্দায় পেঁয়াজের বীজের আবাদ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় এবার বীজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে তাদের।
এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের না পাওয়ায় চাষিরা বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধিদের পরামর্শ নেয়ায় বাড়তি খরচ হচ্ছে। তবে কৃষি অফিসের পরামর্শ পেলে তারা আরো এগিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১৪ দশমিক ৮৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে মান্দায় ১০ হেক্টর জমিতে বীজের আবাদ হয়েছে।
গত দুই বছর থেকে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০-১৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় রাতে চাষিদের খেত পাহারা দিতে গেছে। পেঁয়াজের দাম বেশি পাওয়ার চাষিরা পেঁয়াজের বীজের আবাদে ঝুঁকেছেন।
উপজেলার শিয়াটা, গংগারামপুর, চকউলী, কাশোপাড়া ও সাতবাড়িয়া বেশি পরিমাণ বীজের আবাদ করা হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসে রোপণ করা হলে চৈত্র মাসে ফসলটি উঠে। প্রতি কাঠায় এক থেকে দেড় কেজি বীজ পাওয়া যায়।
গত বছর প্রতি কেজি বীজ সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যেখানে তিন বছর আগে বিক্রি হয়ে আড়াই হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মণ। পেঁয়াজ বীজের আগে চাষিরা পাট, ভুট্টা ও শাক-সবজির আবাদ করতেন।
উপজেলার গংগারামপুর গ্রামের চাষি আফছার আলী বলেন, গত দুই বছর থেকে পেঁয়াজের বীজের আবাদ করছেন। ওই জমিতে আগে ভুট্টার আবাদ করতেন। এ বছর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘাতে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। গত বছর এক কেজি পেঁয়াজের বীজ ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। এ বছর পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আশা করছি এবারো ভালো দামে বীজ বিক্রি করতে পারবো।
শিয়াটা গ্রামের কৃষক আবু বক্কর মোল্লা বলেন, গত দুই বছর থেকে এক বিঘা ১৬ কাঠা জমিতে পেঁয়াজের বীজের আবাদ করছেন। গত বছর যেখানে বীজ হয়েছিল প্রায় ৪৬ কেজির মতো।
১ লাখ ৪৬ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করেছিলাম। অন্য কোনো ফসলে এমন লাভ করা যায়নি। যেমন পরিশ্রম করতে হয়; তেমন লাভও করা যায়। এ বছর লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
গংগারামপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে তিনি দুই বিঘা জমিতে বীজের আবাদ করছেন। পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় গত দুই বছর থেকে বেশি দামে বীজ বিক্রি করতে পারছি।
আমাদের এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা যায় না। তাদের না পাওয়ায় কীটনাশক কোম্পানির লোকজনের কাছে পরামর্শ নিতে হয়। তারা তাদের কোম্পানির ঔষধ লিখে দেয়।
চকউলী গ্রামের উদ্যোক্তা গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের গ্রামটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা। ফসলের কোনো ধরনের সমস্যা হলে নিজেদের চেষ্টায় সমাধান করতে হয়।
মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। আমরা শিক্ষিতরা ফোন করে হয়ত পরামর্শ নিতে পারবো। কিন্তু প্রকৃত কৃষকরা তাদের না পাওয়ায় বিমুখ। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা গ্রামে গ্রামে গেলে কৃষকরা পরামর্শ নিতে পারতো।
তিনি বলেন, কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে পরামর্শ নিলে আমরা প্রতারিত হয়। কারণ তারা নিজেদের স্বার্থে তাদের কোম্পানির ঔষধ লিখবেন। কৃষি অফিসের পরামর্শ পেলে আমরা উপকৃত হতাম এবং খরচটাও অনেকটা কম হতো।
মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. শায়লা শারমিন বলেন, উপজেলায় প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজের আবাদ করা হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এলাকায় যান না এমন অভিযোগ ঠিক না। তবে কৃষকরা যদি তাদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন অবশ্যই সার্বিক পরামর্শ প্রদান করবে। এ ছাড়া কীটনাশকের দোকানগুলোতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নম্বর দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কৃষকরা যেন সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারেন।
নদী বন্দর / পিকে