রাজশাহীতে এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি ভালো দামও পেয়েছেন কৃষকেরা। রাজশাহীর আলু চাষিরা বলছেন, অতীতে কোল্টস্টোরেজ ব্যবস্থার স্বল্পতা থাকায় আলু সংরক্ষণে সমস্যা হতো। তবে বর্তমানে এ সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন উৎপাদিত আলু হিমাগারে রেখে সুবিধা মতন বিক্রয় করা যায়। তাই আলুর বাম্পার ফলনে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে।
এদিকে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, গত বছর ৩৫ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। আর উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এবার জেলায় জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর। এই হিসাবে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পরবর্তীতে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। সোমবার (২২ মার্চ) পর্যান্ত জেলায় ৩২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি থেকে আলু উত্তোলন করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে বাকি জমি থেকে আলু তোলা সম্পন্ন হবে।
আলুর উৎপাদন ও খরচের বিষয়ে কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘায় এবার আলু চাষে খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর উৎপাদন হয়েছে ৮০ থেকে ১১০ মণ করে। প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ১০ থেকে ১১ টাকা।
এর সাথে জমি থেকে আলু উত্তোলন, বাজারজাতকরণে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ মিলে প্রতি কেজি আলুর খরচ পড়ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। আর জেলার স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে, এ বছর হিমাগার মালিক সমিতি প্রতি বস্তায় ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৫০ কেজিতে ১৫০ টাকা করে। এর সাথে শ্রমিক খরচসহ সব মিলিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কোল্ডস্টোরেজে ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা।
মোহনপুর উপজেলার কৃষক মুনতাজ আলী জানান, কয়েক বিঘা আলু লাগিয়েছি এবার। বিঘায় ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। গড়ে আর ৯০ মণ করে আলু পেয়েছি। তোলার পর সেগুলো কোল্ডস্টোরজাত করেছি।
দুর্গাপুর এলাকার কৃষক এনামুল, বুজরোত আলী ও আলাল বলেন, এবার আলুর ফলন বাম্পার, দামও খারাপ না। এবার আমাদের খরচ হয়েছে বিঘায় ৪৫ হাজার টাকা করে। আর প্রায় কৃষক বিঘায় ৯০ থেকে ১১০ মণ করে আলুর উৎপাদন হয়েছে। কিছু নতুন আলু বিক্রি করেছি আর বাকিটা আলু কোল্ডস্টোরেজে রেখেছি।
তানোর উপজেলার চিমনা গ্রামের রবিউল ইসলাম ও সারওয়ার হোসেন জানান, তারা দুইজন এ বছর ছয় বিঘা করে জমিতে আলু রোপণ করেছিলেন। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। আলু উৎপাদন হয়েছে ৫৫০ মণ। বিক্রি হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকায়। অন্যান্য আলুর তুলনায় ‘ডায়মন্ড’ আলুর আবাদ ও ফলন বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ বছর আলুর বাম্পার ফলন ও লাভের সম্ভবনার খুবই ভালো বলে জানিয়েছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক উম্মে সালমা। তিনি বলেন, ‘আলু চাষিদের আমরা প্রণোদনা দিয়েছিলাম। আবহাওয়া ভালো ও দাম ভালো থাকায় কৃষক লাভবান হয়েছে। এ বিষয়ে ৯ টি উপজেলায় সার্বক্ষণিক আমাদের কৃষি অফিসাররা দেখভাল করেছেন। কোনো সমস্যা হলে কৃষকের সাথে গিয়ে কথা বলে সমস্যার সমাধানে কাজ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পূর্বে রাজশাহীতে ভালো ফলন হলে কৃষকেরা তা সংরক্ষণ নিয়ে সমস্যায় পড়তেন। ফলে অনেক সময় বাজারে নামমাত্র মূল্যে বেঁচতে হতো অথবা আলু না তুলে মাটিতেই রেখে দিতেন। বর্তমানে এ সমস্যা নেই। রাজশাহী জেলায় বর্তমানে সরকারি-বেসরকারিভাবে মোট ৩৬টি হিমাগার আছে। এই হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা যাবে মোট ৮০ লাখ বস্তা। সংরক্ষণের সমস্যাও নিরসন হয়েছে। সব দিক থেকেই কৃষক লাভবান।’
নদী বন্দর / পিকে