সম্মুখযুদ্ধে পাক বাহিনীকে পরাজিত করে দেশের জন্য জীবন দিয়ে ভারত সীমান্তে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন ছয় বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা সবাই ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) সদস্য। শহীদ এই ছয় বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মাধবখালী সীমান্তের শূন্যরেখায়।
বিজয়ের ৪৯ বছর পর এই প্রথম চুয়াডাঙ্গার মাধবখালী সীমান্তে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর সঙ্গে সন্মুখ সমরে শহীদ ছয় বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বিএসএফের ৫৪ সীমানগর ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট দেবারাজ সিংয়ের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি দল বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটার সময় সীমান্তের মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিভাবে শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চুয়াডাঙ্গা ৬ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ খালিকুজ্জামান ও উপ-পরিচালক মেজর নিস্তার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শ্রদ্ধাঞ্জলির বিষয়টি বিজিবিকে জানায় বিএসএফ। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবির সদর দফতরের নির্দেশনায় সমাধিস্থলে সব আয়োজন সম্পন্ন করে বিজিবি।
বিজিবির চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফট্যান্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ খালিকুজ্জামান বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর অবদানকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের মাধবখালী সীমান্তে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথ অপারেশনে সেদিন পরাজিত হয় পাকাহানাদাররা। শহীদ হন ছয় বীর সৈনিক। বিজয়ের ৪৯ বছরে বিএসএফ এই প্রথম এই সমাধিতে আনুষ্ঠানিভাবে শ্রদ্ধা নিবদেন করল বিএসএফ। এতে আমরাও গর্বিত ও আনন্দিত।’
বিএসএফের কমান্ড্যান্ট দেবারাজ সিং বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসে আমরা বিএসএফের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। এই বীর সৈনিকরা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাদের এই আত্মত্যাগে আমরাও গর্বিত। আমি আশা করি, ভবিষ্যতেও ভারতের বিএসএফ কর্তৃক এই সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর ধারা অব্যাহত থাকবে।’
১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কমান্ডার মেজর দত্ত ও বর্ম্মা এবং ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমানের (প্রয়াত সাবেক সেনা প্রধান মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান) নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে জীবননগরের মাধবখালী সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে প্রবেশ করে এ অঞ্চলে অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এ সময় রাজাপুর ও মাধবখালী সীমান্তে সস্মুখ সমরে শহীদ হন হাবিলদার আব্দুল গফুর, নায়েক আব্দুল মালেক, আব্দুর রশিদ, সিপাহি সিদ্দিক আলী, আব্দুল আজিজ ও আবু বকর।
শহীদ এই ছয় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মাধবখালী সীমান্তের শূন্যরেখায় পাশাপাশি সমাধিত করা হয়। যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর ২৯ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা যৌথ বাহিনীর পরাজিত হয়।
নদী বন্দর / পিকে