1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
উৎপাদন খরচই উঠছে না পেঁয়াজ চাষিদের - Nadibandar.com
সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৪১ বার পঠিত

গত দু’ বছর পেঁয়াজ চাষিরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়লেও বাজারে ভালো দাম পেয়ে লাভবান হয়েছেন। এবার নিরাপদেই পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারছেন চাষিরা। তবে দাম কম থাকায় তাদের উৎপাদন খরচ উঠছে না। এজন্য ভরা ফসলের মাঠেও হাসি নেই চাষিদের মুখে। তাই বলে পেঁয়াজ উৎসব থেমে নেই। পেঁয়াজের মাঠ থেকে চাষির বাড়ি, হাট আর ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পেঁয়াজ পরিবহনে সরগরম এখন পাবনা জেলার বহু এলাকা।

পাবনার সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলার মাঠের পর মাঠ জুড়ে পেঁয়াজ। চাষিরা এখন পেঁয়াজ তুলতে মহাব্যস্ত।

শুক্রবার সাঁথিয়া উপজেলার বিল গ্যারকা ও গাজনা পাড়ের বড় বড় মাঠে গিয়ে চাষিদের সাথে কথা হয়।

চাষিদের কথায়, ‘তাদের মাথায় হাত পড়েছে। কারণ এবার হালি পেঁয়াজ বিক্রি করে চাষের খরচ উঠছে না। যাদের নিজের জমি তারা খরচ ওঠাতে পারলেও যারা জমি লিজ নিয়ে চাষ করেছেন তারা ক্ষতির মুখে।’

অনেক ক্ষুদ্র চাষি বেশি দামের আশায় চড়া সুদে মহাজনী ঋণ নিয়ে পেঁয়াজ আবাদ করে বিপদে পড়েছেন। তবে বছর শেষে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও সে লাভ মজুতদার-মহাজনদের পকেটে উঠবে বলে চাষি সংগঠনের নেতারা জানান।

কৃষি তথ্য সার্ভিস পাবনার আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কুমার সরকার জানান, পাবনা জেলায় এবার (কন্দ ও চারা পেঁয়াজ মিলিয়ে) ৫২ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় এ বছর ১৭ হাজার ১৫০ হেক্টর আর সুজানগর উপজেলায় ২০ হাজার ৬৪১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাবনা জেলার এ দুই উপজেলাতেই সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়।

প্রশান্ত কুমার সরকার আরও জানান, গত বছর পাবনা জেলায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে বেশি অর্থাৎ প্রায় ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়। গত দু’ বছর পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। এজন্য কৃষকেরা এবার পেঁয়াজ চাষে আরও বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। এবছরও পাবনায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। পাবনা জেলা থেকেই উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন যা মোট উৎপাদনের এক চতুর্থাংশ। আর পাবনা জেলার সাঁথিয়া-সুজানগর উপজেলা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ। সে হিসাবে সারাদেশে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের এক পঞ্চমাংশ উৎপাদিত হয় পাবনার এ দুটি উপজেলা থেকে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলার চাষিরা দুটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ করে থাকেন। এর একটি মূলকাটা ও অন্যটি হালি পদ্ধতি। মূলকাটা পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ও হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে।

মূলকাটা পদ্ধতিতে আবাদ করা নতুন পেঁয়াজ জানুয়ারি মাসে হাটে উঠতে শুরু করে। আর হালি পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজ হাটে ওঠে মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

শনিবার (৩ এপ্রিল) দেশের অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ পেঁয়াজ ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

হাটে পেঁয়াজের আড়তদার ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ৬/৭ মাস আগেও প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ছিল তিন হাজার টাকার কাছাকাছি। মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ চাষ করে অস্থিতিশীল বাজারে কিছু চাষি লাভবান হয়েছিল।

তিনি বলেন, নতুন হালি পেঁয়াজ হাটে উঠতে শুরু করেছে বেশ কিছুদিন আগেই। এখন পেঁয়াজের দাম এভাবে নেমে যাওয়ায় কৃষকের লাভতো দূরের কথা উৎপাদন খরচ উঠবে না।

সাঁথিয়ার কুমিরগাড়ী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মো. আলামিন ফকির জানান, তিনি দেড় বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তার মোট ৮৫ হাজার টাকা খরচ। দেড় বিঘা জমিতে তিনি বড়জোড় ৬০ মণ পেঁয়াজ পাবেন। এতে পেঁয়াজের বাজার দর অনুযায়ী তার অনেক টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

বিশ্বাসপাড়া গ্রামের খাজা রাসেল জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এতে প্রতি বিঘায় তার ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি ফলন পাচ্ছেন বিঘাপ্রতি ৪০-৪৫ মণ। বাজার দর অনুযায়ী তার চাষের খরচ উঠতে পারে। কিন্তু আরও খরচ রয়ে গেছে। যেমন- কাটা, মাচায় তোলা, মাচা বানানো, জমি থেকে বাড়ি নেয়া, হাটে নেয়া ইত্যাদি খরচ। এর ওপর নিজের পরিশ্রমতো রয়েছেই। সব মিলিয়ে তিনি বিরাট ক্ষতির শিকার।

সাঁথিয়ার পদ্মবিলা গ্রামের বেশ কিছু চাষি জানান, এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করে এখন ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বছরে অন্য দুটি ফসল চাষ করে তারা সে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করবেন।

এদিকে চাহিদা বেশি থাকায় এবার পেঁয়াজ বীজের দাম ছিল গতবারের প্রায় দ্বিগুণ। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজ ৭-৮ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বেশি দামে পেঁয়াজ বীজ কেনায় চাষিদের এবার উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে।

এত কিছুর পরও কিন্তু পেঁয়াজ উৎসব থেমে নেই। চাষির বাড়িতে ভ্যান গাড়ি, অটোবাইট, নছিমন, করিমন আর ঘোড়ার গাড়িতে পেঁয়াজ আসছে। তারা বাড়তি কিছু টাকাও উপার্জন করছেন। পেঁয়াজ তোলার জন্য অন্য জেলার শ্রমিকরাও এসেছেন। রাত জেগে কৃষাণ বধূরা পেঁয়াজ কাটছেন, মাচায় তুলছেন।

পেঁয়াজ মৌসুমে শুধু পেঁয়াজ কেটেই স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেক দরিদ্র নারী। প্রতিমণ ৪০ টাকা দরে পেঁয়াজ কেটে জমানো টাকা দিয়ে অনেকে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। অনেক নারী প্রতি মৌসুমে ২০-২৫ হাজার টাকা পান পেঁয়াজ কেটে। এছাড়া যে পেঁয়াজ তারা বকশিশ পান তা দিয়ে সারা বছর তাদের খাওয়ার পেঁয়াজ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি ও পাবনা জেলার বিশিষ্ট চাষি আলহাজ্ব শাহজাহান আলী বাদশা জানান, বছরের শেষদিকে অনেক সময় পেঁয়াজের দাম বাড়ে। তবে সেই দাম সাধারণ চাষিরা পায় না। কারণ চাষের খরচজনিত দেনার কারণে তাদের মৌসুমের শুরুতেই সিংহভাগ পেঁয়াজ বেচে ফেলতে হয়। বাধাইকাররা বেশি দাম ধরতে পারে।

তিনি জানান, পেঁয়াজ চাষে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার সরকারি ঘোষণা থাকলেও সাধারণ চাষিরা সে সুবিধা পচ্ছেন না। তারা চড়া সুদে মহাজনী ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের জানান, এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েননি চাষিরা। তাই পেঁয়াজ ঘরে রাখতে পারছেন।

তিনি বলেন, তার জানামতে সরকার আগামী কয়েক মাস পেঁয়াজ আমদানি করবে না। সেক্ষেত্রে চাষিরা ভালো লাভবান হতে পারবেন।

নদী বন্দর / এমকে

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com