বরেন্দ্র অঞ্চলে ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এতে বাড়িতে বসানো শত শত সাবমার্সেবল পাম্প পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপগুলো পানিসংকটে ধুঁকছে। বোরো খেতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। এদিকে মুন্ডুমালা পৌরসভা ও বাধাইড় ইউনিয়নে একটি করে ভূগর্ভস্থ তলদেশের পানির স্তর পরিমাপক কূপ বসানো ছিল, সে পরিমাপক কূপ দুইটিও পানি শূন্য হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে গবেষণা করছেন। ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নামায় চিন্তিত গবেষকরা।
কারণ নিচে পানিশূন্য হলে বালি, পাথর ফাঁকা হয়ে পড়বে। তাতে করে সামান্য ভূমিকম্প হলেই দেবে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, প্রথমেই ভূগর্ভস্থ থেকে সেচ কাজে পানি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পুকুর-খাড়ি বেশি করে খনন করতে হবে। বাসাবাড়ির ছাদের পানি ভূগর্ভস্থে রিফাইনিং করে ঢুকাতে হবে।
তানোরের মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান বলেন, ‘এ এলাকার প্রধান সমস্যা এখন সেচ ও খাওয়ার পানি। হ্যান্ড টিউবওয়েল বন্ধ হয়ে গেছে, তারপর একের পর এক সাবমার্সেবল নলকূপ বসিয়েও পানিসংকট সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। মাত্র দুই বছর আগে বসানো সাবমার্সেবল পাম্পগুলো পানির অভাবে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
চৈত্র মাস পড়তে না পড়তেই পুকুরের পানি তলানিতে। তবুও পচা দুর্গন্ধ।’ তিনি আরো বলেন, ‘বোরো মৌসুমে বেশি মাত্রায় পানি ব্যবহারের ফলে এ অঞ্চলে প্রতি বছর গড়ে দুই ফুট করে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এমনটি হওয়ার কারণে পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ডাসকো ফাউন্ডেশন পরিচালিত সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের (আইডাব্লিউআরএম) বরেন্দ্র অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রজেক্টর জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচকাজে ভূগর্ভস্থ থেকে অতিরিক্ত মিঠাপানি উত্তোলনের ফলে ক্রমগতভাবে পানির স্তর নিচে নামছে। তানোরের মুন্ডুমালা পৌরসভা ও বাধাইড় ইউপিতে দুইটি পর্যবেক্ষণ কূপ (পরিমাপক) প্রায় ৩০০ ফুট গভীরে বসানো ছিল। চলতি বছর এ দুই কূপও পানিশূন্য হয়ে অকেজো হয়ে গেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (আইবিএস) গবেষক রাজ্জাকুল ইসলাম জানান, ১৯৮০ সালে এ অঞ্চলে পানির স্তর মাত্র ৩৯ ফুট নিচে ছিল। তবে ৩৬ বছরের ব্যবধানে ২০১৬ সালে ১১৮ ফুট নিচে নেমে গেছে। ১০০ থেকে ১৫০ ফুট নিচে পাতলা একটা পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, দেশের গড় বৃষ্টিপাত ২ হাজার ৫০০ মিলিমিটার হলেও এ এলাকায় গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ মিলিমিটার। বৃষ্টিপাতে ভূগর্ভস্থ পানির গড় পুনর্ভরণের হার দেশে ২৫ শতাংশ হলেও এ অঞ্চলে মাত্র ৮ শতাংশ।
নদী বন্দর / পিকে