বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের আমতলা খাল খনন না করেই বাঁধ কেটে দিলেন ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদের ভেকু মেশিন (মাটি কাটা মেশিন) চালক মোঃ সোহান চৌধুরী ও তার সহযোগীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশনাল অফিসার (এসও) মোঃ আমিনুল ইসলামের যোগসাজসে ঠিকাদার খাল খননের অনিয়ম ধামাচাপা দিয়ে টাকা আত্মসাতের জন্য তিনটি বাঁধ কেটে দিয়েছেন।
বাঁধ কেটে ভেকু মেশিন নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা ঠিকাদারের তিনটি ভেকু মেশিন আটকে দিয়েছেন। খাল খননের অনিয়মের সাথে জড়িতদের শাস্তি ও ক্ষতিপুরণ দাবীতে সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
জানাগেছে, বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের আমতলা খালে ৭’শ মিটার খননের জন্য গত ফেব্রুয়ারী মাসে দরপত্র আহবান করেন। ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই কাজ পায় পটুয়াখালী মেসার্স আজাদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। খাল খনন কাজ পেয়েই ঠিকাদারের লোকজন খালে সেচ দেয়। সেচ দিয়ে প্রায় একমাস খাল শুকানোর জন্য রেখে দেন।
গত ২০ মার্চ তিনটি ভেকু মেশিন দিয়ে ওই খাল খনন কাজ শুরু করেন। খনন কাজ শুরু করার পূর্বে ঠিকাদারের লোকজন ওই খালের দুইপাড়ে অন্তত এক হাজার পাঁচ’শ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলেছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিকে খাল খনন করতে গিয়ে ঠিকাদারের লোকজন খালের পাড়ে বসবাসরত কাসেম গাজী, আলাউদ্দিন, রশিদ আকন, সোবাহান মোল্লা, ইসমাইল মোল্লা, দুলাল আকন, কাসেম মোল্লা, বেলাল হাওলাদার, হাসেম হাওলাদার ও নুর আলম কবিরাজের বাড়ী কেটে ফেলে।
এতে তাদের অন্তত ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অপর দিকে দরপত্রে উল্লেখ আছে ওই খানের গভীরতা প্রকার ভেদে ১ থেকে ৩ ফুট, তলা ৬০ ফুট এবং প্রস্থ ৮০ ফুট। কিন্তু ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ নামে মাত্র খাল খনন করে মাটি ছত্রতত্র ফেলে রেখে দিয়েছে। ৭’শ মিটার দৈর্ঘ্য খালের প্রথম ভাগে অন্তত দুই’শ পঞ্চাশ মিটার এবং শেষ ভাগে অন্তত দের’শ মিটার বাকি রেখে মধ্যখানের ৩’শ মিটার খাল খনন করেছে।
পুরো খাল খনন না করেই সমুদয় বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করতে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশনাল অফিসার (এসও) মোঃ আমিনুল ইসলামের যোগসাজসে ঠিকাদারের লোকজন ওই খালের তিনটি বাঁধ কেটে দিয়েছেন। ঠিকাদারের ভেকু চালক মোঃ সোহান চৌধুরী সোমবার সকালে বাঁধ তিনটি কেটে দেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ সময় স্থানীয় লোকজন বাঁধ কাটতে নিষেধ করলে ভেকু মেশিন চালক সোহান তাদের ভয়ভীতি দেখান এবং জীবন নাশের হুমকি দেয়। বাঁধ কেটে দেওয়ায় খাল পানিতে তলিয়ে গেছে। বাঁধ কাটার ঘন্টাখানের পরে ঠিকাদারের লোকজন ভেকু মেশিন নিয়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে।
এ সময় স্থানীয় জনতা ঠিকদারের লোকজন ও তিনটি ভেকু মেশিন আটকে দেয়। ওই দিন দুপুরে ভুক্তভোগীরা ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ, তার সহযোগী, এসও মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি এবং ক্ষতিপুরণ দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। খবর পেয়ে গাজীপুর ফাড়ির পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, খাল খননের জন্য ৭’শ মিটার খালে তিনটি কাটা বাঁধ দেয়া হয়েছিল। ওই বাধ তিনটি কাটা। বাঁধ দিয়ে খননকৃত খালে পানি দেদাসে প্রবেশ করছে। খালের প্রথম ভাগে অন্তত দুই’শ পঞ্চাশ মিটার এবং শেষ ভাগে অন্তত দের’শ মিটার বাকি রেখে মাঝের অংশের খাল খনন করেছে। ওই খালে এখন পানিতে ভরপুর। খাল খননের পরেও মানুষ ভরা খালের মধ্যে হাটু পানিতে দাড়িয়ে রয়েছে।
ওই খাল পাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ কাসেম গাজী, আলাউদ্দিন ও রশিদ আকন, খাল কেটে কুমির আনলাম। খাল কাটাতো হলেই না উল্টো আমাদের বাড়ী ঘর ভেঙ্গে এবং গাছপালা কেটে তছনছ করে দিয়েছে ঠিকাদারের লোকজন। আমরা এ ঘটনার শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবী করছি।
নুর আলম কবিরাজ, সোবাহান মোল্লা ও বেলাল হাওলাদার বলেন, ঠিকাদার খাল কাটার নামে বাড়ী কেটেছে। তারা আরো বলেন, খাল কাটার অনিয়মের বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করায় ঠিকাদারের ভেকু মেশিন চালক সোহান চৌধুরী আমাদের ভেকু মেশিনে চাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
ইসমাইল মোল্লা ও হাসেম হাওলাদার বলেন, নাম মাত্র খাল কেটেছে। শুধু মাত্র খালের মাঝখানের কাদা-মাটি এলোমেলে করে পাড়ে রেখে দিয়েছে। এমন খাল না কাটলেই হতো। তারা আরো বলেন, খাল খননের অনিয়মের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঠিকাদারের লোকজন বাঁধ কেটে দিয়েছে।
আলমগীর হাওলাদার বলেন, কি খাল কেটেছে? পানি ভরা খালে হেটে এপার থেকে ওপাড় যেতে কোন সমস্যা হবে না।
নদী বন্দর / পিকে