জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী কোনো পুকুর, জলাশয়, খাল, লেক ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও নিষিদ্ধ। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে নাটোর শহরের সরকারি রানীভবানী মহিলা কলেজের পেছনে এ আইন অমান্য হচ্ছে। শহরের কাপুড়িয়াপট্টির গোলাম আজম নামে এক ব্যক্তি জলাশয় ভরাট করে চারতলা ভবন নির্মাণে নেমেছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শহরের বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ।
জলাশয়টি ভরাট না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক এবং নাটোর পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিভিন্নজন। তবে এ রির্পোট সংগ্রহ করতে গেলে চড়াও হন এবং মামলা করারও হুমকি দেন গোলাম আজম ও তার ছেলে।
এদিকে নাটোর জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ওই জায়গার ওপর ভরাট কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
জানা যায়, ০.৯১২ একর জমি শ্রেণি ডোবা, যার আরএস দাগ ৫১২৭ এবং খতিয়ান নং৩৩৫ জেলা শহরের একমাত্র সরকারি রানীভবানী মহিলা কলেজের পেছনে জমিটি অবস্থিত। এটি শহরের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। জলাশয়টি সারা বছর পানি ভর্তি থাকে এবং এটি শহরের নিচা বাজার, চৌধুরী বাড়ি থেকে শুরু করে ছায়াবানী সিনেমা হলের দিক দিয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশ দিয়ে এসে ভূষিখালি জোলার সাথে মিলিত হয়ে নারদ নদে সারা বছর পানি নিষ্কাশন করে থাকে। এছাড়া জলাধারের আশপাশে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস এখান থেকে পানি ব্যবহার করে আগুন নেভাতে সহায়তা পেত।
এর বাইরে লিজের মাধ্যমে এই ডোবায় মাছচাষও করা হত। কিন্তু ডোবাটি ভরাট করে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। নির্মাণ কাজের জন্য শুরু করা হয়েছে জলাশয়টি ভরাটকরণ। বিষয়টি দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
অনুসন্ধান জানা যায়, জমিদারি প্রথা চলাকালীন সময়ে শহরের চৌধুরী বাড়ির আব্দুস ছালাম খাঁন চৌধুরী, ১৪ শতক ১২ লিংক পুকুর জমিদার আনান্দরায় নারায়নের কাছ থেকে মাত্র কুড়ি টাকায় ওই ভূমির পত্তন নেন। পরে ২০০২ সালে আব্দুস ছালাম খাঁন চৌধুরীর ওয়ারিশদের কাছ থেকে ক্রয় করেন ভূমির মালিক দাবিকারি গোলাম আজম। এরপর ২০০৪ সালে ০.৯১২ একর জমি খাজনা খারিজ করেও ফেলেন তিনি।
এদিকে শহরের পানি নিষ্কাশনের ৪ ফুট ড্রেনেজ ব্যবস্থা রেখে ওই জলাশয়ের ওপর ৪ তলা আবাসিক ভবন করার লক্ষ্যে পূর্ব-পশ্চিম বাহু বরাবর উত্তর বাহু ২৭২.৫০ বর্গফুট জায়গা ছেড়ে দেয়ার কথা বলে গত ১৬ মার্চ নাটোর পৌরসভার সাথে চুক্তিবদ্ধ হন গোলাম আজম ও মোছা. রুজিনা খাতুন।
নাটোর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, শহরের ভেতরে হোক বা বাইরে, পানি সংরক্ষণের জায়গাগুলো ভরাট বা বন্ধ না করাই উত্তম; বিশেষ করে শহরের ভেতরে হলে সেটি কোনোভাবেই ঠিক নয়। কারণ অগ্নিকাণ্ডের সময় এসব পুকুর বা খাল থেকে পানি নেয়ার প্রয়োজন হয়।
নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।
এ ব্যাপারে নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরি জলি জানান, পৌর কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে এবং ভূমির শ্রেণি তথ্য গোপন করে একটা প্ল্যান করে নেন ওই ব্যক্তি (গোলাম আজম)। পরবর্তীতে বিষয়টি জানার পর ওই প্ল্যান নোটিশের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইতোপূর্বে ওই জায়গার ওপর কাজ বন্ধ করার র্নিদেশ দিয়েছিলাম। সোমবার দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্দেশনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের কথামতো শহরের সমস্ত পুকুর জলাশয় ভরাট না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ তার অমান্য করলে ভূমি ব্যবস্থপনা আইন ও জলাধার আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নদী বন্দর / জিকে