কৃষকের স্বপ্ন পুড়ে চিটা হয়ে গেছে। ঋণ পরিশোধের চিন্তায় এখন তারা দিশেহারা। বরগুনার আমতলী উপজেলার ২৫ হেক্টর জমির বোরো ব্রি-৪৭ ও ২৮ ধান নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। গত রোববারের কালবৈশাখী ঝড় ও চৈত্রের ভ্যাপসা গরমে কচি ধান নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে গেছে বলে তাদের দাবি।
উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ধান নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে যেতে পারে। ব্রি ধান-৪৭ ও ২৮ এর সহনীয় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু গত এক সপ্তাহ জুড়ে তাপমাত্রা ছিল অন্তত ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। তাই ধানের এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার একশ হেক্টর। ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। কৃষকরা লাভের আশায় বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু গত ৭-৮ দিন আগে খেতে কৃষকরা ধানের শীষে পরিবর্তন দেখেন। তারা দেখতে পান ধানের শীষ চিটায় পরিণত যাচ্ছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিমকে অবহিত করেন। কিন্তু এর তেমন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২৫ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে চিটা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারিভাবে এর পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপজেলার ২৫ হেক্টর জমির মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমতলী সদর ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা, নাচনাপাড়া, শারিকখালী, মরিচবুনিয়া, কুকুয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর, খাকদান, কুকুয়া, গুলিশাখালী ইউনিয়নের ডালাচারা, আঙ্গুলকাটা, গোজখালী, আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী, গোডাঙ্গা, গাজীপুর, হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া, টেপুড়া, রাওঘা, চিলা ও চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা, কাউনিয়া ও চন্দ্র এলাকায়।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আমতলী সদর ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা, নাচনাপাড়া ও মরিচবুনিয়া গ্রামের ধানখেত সবুজে ঘেরা। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা যায় ধানের ৮০ ভাগ নষ্ট। চিটা হয়ে শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী তালতলী উপজেলায়ও একই অবস্থা।
মহিষডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মনোয়ার হাওলাদার বলেন, ধারদেনা করে ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে সোয়া দুই একর জমিতে বোরো ব্রি ধান-৪৭ ও ২৮ চাষ করেছিলাম। ফলন ভালোই হয়েছিল কিন্তু হঠাৎ করে ধান নষ্ট হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। কিভাবে ঋণ পরিশোধ করব সেই পথ খুঁজে পাচ্ছি না। আমার সকল জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষক হালিম বলেন, জমির সকল ধান নষ্ট হয়ে চিটা হয়েছে। দুই একর জমির মধ্যে পাঁচ শতাংশ জমির ধানও ভালো নেই। আমাদের এই বিপদে সরকারের কাছে সাহায্যের দাবি জানাই।
বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলিমুর রহমান বলেন, বাতাসের কারণে ধানের পরাগায়ন ও দানা গঠন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া অধিক তাপমাত্রায় পরাগরেণু শুকিয়ে ধান চিটায় পরিণত হতে পারে।
নদী বন্দর / পিকে