1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে ফসলের খেতে রোজ ঢুকছে জোয়ারের পানি - Nadibandar.com
বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৪২ বার পঠিত

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের কৃষকের দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাঙা বেড়িবাঁধ। উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের ভুলুয়া নদীর পাশের বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে দুটি গ্রামের সব ফসলি জমি।

জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হয়েছে প্রায় ১০০ একর জমির রবিশস্য তরমুজ, ঢেঁড়স, সয়াবিন, মরিছ, আলু, ডালসহ রবিশস্য। এতে ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকার ফসলের। ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতার কারণে এই বাঁধটি সঠিক সময় মেরামত না করায় গত তিন-চার বছর ধরে তারা বার বার ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাঁধটি দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সরজমিনে মধ্যম ও দক্ষিণ চরব্যাগ্গা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার মধ্যবর্তী সীমানায় ভুলুয়া নদী। পশ্চিমে রামগতির চর রমিজ ও পূর্বে সুবর্ণচরের চর ব্যাগ্গা গ্রাম। পশ্চিমে চর জেগে ওঠায় সীমাহীন ভাঙনের কবলে পড়ে পূর্বাঞ্চল।

উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনের সুবিধার কথা চিন্তা করে ১৯৮৬ সালে চর ব্যাগ্গা গ্রামে ভুলুয়া নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন সময় বন্যা ও প্রাকৃতিক জলোচ্ছ্বাসের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ বাঁধটি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের দিকে তা মেরামত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ২০১৭ সালের শেষের দিকে ও ২০১৮ সালে প্রচণ্ডভাবে ভাঙতে শুরু করে বেড়িবাঁধের কিছু অংশ।

গত তিন বছর বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে আশপাশের বাড়ি-ঘর, পুকুর ও ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ে নদীর লবণাক্ত পানি। আর চলতি বছরে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় প্রচণ্ড জোয়ারে বেড়িবাঁধের অন্তত ৩০০ মিটার ভেঙে গিয়ে ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকতে শুরু করে।

এদিকে জোয়ারের পানিতে গত ২৬ মার্চ থেকে প্রতি ১২ ঘণ্টায় একবার জমিগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এতে দুই-তিন ঘণ্টা স্থায়ীভাবে কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকার পর খেতে থাকা ফসল নিয়ে নদীতে নেমে যাচ্ছে জোয়ারের পানি। বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় শুকনো মৌসুমে যে পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়েছে তা বর্ষায় আরও কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

চরজুবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কৃষক চৌধুরী আলম বলেন, গত জানুয়ারি মাসে বীজের মাধ্যমে দুই একর জমিতে রবিশস্য (তরমুজ, ঢেঁড়স, সয়াবিন) চাষ করি। শ্রমিকসহ মোট উৎপাদনে খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা। ১৫ দিন আগে খেতে ফলন আসতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ফসল উঠলে অন্তত তিন লাখ টাকা বিক্রি করার আশা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে গত ২৬ মার্চ পূর্ণিমার সময় ভুলুয়া নদীর পাশের ভাঙা বেড়িবাঁধের ভেতর দিয়ে ঢুকতে শুরু করেছে লবণাক্ত পানি, যা এখনও চলমান। আর এ পানি নেমে যাওয়ার সময় খেতের ফসল নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে খেতে থাকা গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এই কারণে এক টাকার ফসলও তুলতে পারেননি তিনি।

ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সবজি চাষি পারুল আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত দুই বছর বড়লোকের জমিতে বর্গাচাষ করে ক্ষতির মুখে পড়ে স্বামী আবদুর রব কুমিল্লার লালমাই এলাকার একটি ইটভাটায় কাজে চলে গেছেন। চলতি বছরে আবহাওয়া ভালো থাকায় তিন একর জমি বর্গা নেন তিনি। এরপর বিভিন্ন এনজিও ও স্থানীয় কয়েকজন থেকে সুদের ওপর দুই লাখ টাকা নিয়ে তিন একর জমিতে সয়াবিন ও ঢেঁড়স চাষ করেন।

গাছের বৃদ্ধি ও ফুল দেখে তার পরিচর্যায় খরচ করেন আরও কয়েক হাজার টাকা। ফলন বড় হওয়ার আগ মুহূর্তে পাশের ভুলুয়া নদী থেকে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে ফসলের খেতে। গত কয়েকদিনে একাধিক বার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় তার জমিগুলো।

বর্তমানে প্রতিটি খেতের গাছ লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। নিজের পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে একদিকে যেমন মানবেতর জীবন কাটছে অন্যদিকে এনজিওর ঋণ ও সুদের টাকা কিভাবে শোধ করবেন তার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না পারুল। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে সরকারি সহযোগিতার আবেদন করেছেন তিনি।

এলাকাগুলোতে দেখা গেছে, চৌধুরী আলম, পারুল, নুরুল হক, জসিম উদ্দিন, মাঈন উদ্দিন, ফজলে মেস্ত্রী বা সোলায়মানের মতো জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এ দুই গ্রামের অন্তত ৮০ জন কৃষক। প্রায় ১০০ একর জমির ফসল হারিয়ে অন্তত এক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। তাদের সবার দাবি, অতিদ্রুত যেন এ বেড়িবাঁধটি মেরামত করা হয়।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রতিনিধি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। কৃষি ধ্বংস হওয়া মানে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাওয়া। আর গত কয়েক বছর ধরে এ বেড়িবাঁধের মেরামত না করায় উপকূলের কৃষকরা বার বার ক্ষতির মুখে পড়ছে। এতে চাষে কৃষকদের আগ্রহ হারাচ্ছে। চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি রবিশস্যের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অধিদফতরের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের একটি তালিকা করে সরকারি সহযোগিতার অনুরোধ করেন তিনি।

জনপ্রতিনিধি ডা. ওজি উল্যাহ জানান, বেড়িবাঁধটি না থাকায় বার বার এ অঞ্চলের লোকজন ভাঙনের কবলে পড়ছে। গত কয়েক বছরে অন্তত অর্ধশতাধিক পরিবার এলাকা ছেড়ে অনত্রে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এখনও ভাঙন হুমকিতে রয়েছে আরও দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও দোকান-পাট। জোয়ারের পানিতে পাঁচ-ছয় ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় এ এলাকা। ফসলি জমির পাশাপাশি জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে দোকান-পাট, মাছের প্রজেক্ট ও বসতঘরে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ জানান, খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি খেতগুলো তিনি পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন কৃষকদের ফসলের ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, ব্যাগ্গা গ্রামের ভুলু নদীর পাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধটির মেরামতের জন্য সিডিএসপি আওতায় পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০ মিটার মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।

নদী বন্দর / জিকে

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com