করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এ সময় যে কেউই আক্রান্ত হতে পারেন কোভিড-১৯ এ। সবাই কমবেশি জানেন, কোভিড-১৯ এর উপসর্গ হতে পারে, জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, চোখ ওঠা বা লাল হয়ে যাওয়া, মাথা ব্যথা ইত্যাদি।
করোনাভাইরাসের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো স্বাদ হারানো। কোনো খাবারের স্বাদ ও গন্ধ হারিয়ে ফেলাও এ সময় করোনার প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে, বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ৬০ শতাংশেরও বেশি করোনায় আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে স্বাদ ও গন্ধ হারিয়ে ফেলার তথ্য বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) পরিচালিত নতুন এক গবেষণা অনুসারে, এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেই মুখের নানা সমস্যায় ভুগেছেন। শুধু স্বাদ হারিয়ে ফেলাই নয় বরং আরও কিছু ওরাল সিম্পটোমস আছে, যেগুলো কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের মধ্যে প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়।
করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ৭-১০ দিনের মধ্যে এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। ততদিনে করোনাভাইরাসের জীবাণু ফুসফুসসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সব অংশে বংশবিস্তার করে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকে। আর তখনই বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায় শরীরে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে মুখের গহ্বর এবং টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও এর কোনো প্রমাণ নেই। তবে মুখের মধ্যে ভাইরাস থাকে বলেই, কথা বলা, কাশি, জোরে শ্বাস নেওয়া ইত্যাদি কারণে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এনআইএইচ এর সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, সংক্রমণের অন্যান্য লক্ষণসমূহ প্রথমে প্রকাশ না পেলেও প্রাথমক অবস্থায় মৌখিক বিভিন্ন উপসর্গ টের পাওয়া যায়। জেনে নিন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে শরীরে মুখে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে-
শুষ্ক মুখ: গলা ও জিহ্বা বারবার শুকিয়ে আসতে পারে। শুষ্ক মুখের এ লক্ষণটি বিভিন্ন ভাইরাল সংক্রমণ, অটোইমিউন ডিসঅর্ডার এবং বর্তমানে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেও হতে পারে।
মুখের মধ্যে যে লালা উৎপাদিত হয়, সেটি মুখকে আর্দ্র রাখে। এটি হজমে সাহায্য করে এবং মুখে থাকা খারাপ ব্যাকটেরিয়া এবং রোগ-জীবাণু থেকেও সুরক্ষিত রাখে।
মুখ শুষ্ক থাকলে দুর্গন্ধ হতে পারে। শুষ্ক থাকলে খাদ্য চিবানো, কথা বলার সময়ও আপনার কষ্ট হতে পারে। এমন লক্ষণ টের পেলে এখন থেকেই সাবধানতা অবলম্বণ করুন।
মুখে ঘা: কোভিড-১৯ এর মতো ভাইরাল সংক্রমণের ফলে ভাইরাস পেশির ফাইবারগুলোতে অর্থাৎ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আস্তরণগুলো আঘাত হানে। এ প্রদাহের ফলে জিহ্বা এবং মাড়ির অঞ্চলগুলোতে ঘা ও ফোলাভাব হতে পারে।
যদিও মুখে ঘা ভাইরাল সংক্রমণ ছাড়াও আলসার এবং অ্যালার্জির কারণেও হতে পারে। মুখে ঘা হলে খাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তাই শুষ্ক মুখ অথবা ঘা হলে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।
কোভিড জিহ্বা: বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত ভাইরাল উপসর্গ হলো কোভিড জিহ্বা। এর কারণ এখনো জানা যায়নি। সার্স কোভ-২ এর মতো ভাইরাস অবশ্যই আপনার জিহ্বাকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিভিন্ন কেস স্টাডি অনুযায়ী, কোভিড জিহ্বার অভিজ্ঞতা বেশ কঠিন হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর জিহ্বায় জ্বালা-পোড়া ভাব হতে পারে। কিছু চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, জিহ্বার সংবেদনশীল অংশে ব্যথাযুক্ত ফুসকুড়িও হতে পারে।
জিহ্বার রং বদলায়: কোভিড-১৯ সংক্রমণের ফলে বদলে যেতে পারে জিহ্বার রং। মুখের জ্বালা, ফোলাভাব এবং প্যাথোজেনের কারণে জিহ্বার রং ফ্যাকাশে হতে পারে।
ঠোঁট ও জিহ্বাতে জ্বালা ভাবেরও সৃষ্টি হতে পারে। ভাইরাসের আক্রমণে জিহ্বা তার স্বাভাবিক রং পাল্টে গোলাপি থেকে অস্বাভাবিক লালচেভাব, ফ্যাকাশে বা গাঢ় বর্ণের জিহ্বা দেখা যায়।
তবে এসব উপসর্গ কোভিড-১৯ সংক্রমণের ফলেই হবে তা কিন্তু নয়। করোনাভাইরাসের নতুন সব লক্ষণগুলোর মধ্যে এগুলো হওয়ার আশঙ্কা আছে। এসব লক্ষণগুলো অন্যান্য বিভিন্ন কারণেও প্রকাশ পেতে পারে।
তবে যদি শরীরে অস্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো অনুভব করেন; তাহলে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
নদী বন্দর / পিকে