স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নিজের ফসলের খেতে জাতীয় পতাকা ফুটিয়ে তুলেছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নূরে আলম সিদ্দিকী। সবুজ ও বেগুনি ধানের বীজ দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ করেছেন তিনি। পরবর্তী বছরে বৃহৎ আকারে ধানখেতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলার ইচ্ছে তার। ইতোমধ্যে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন জাতীয় পতাকার আদলে রোপিত ধানখেত দেখতে।
নূরে আলম সিদ্দিকী স্থানীয় ধানশাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের জমিতে নিজেই ধানচাষ ও মাছের ঘের করেন প্রতি বছর।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে দেশ। ইউটিউব দেখে বেগুনি ধানের খোঁজ নিয়ে বীজ সংগ্রহ করে জাতীয় পতাকার আদলে এই মাঠ সাজিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে স্থানীয়দের মাঝে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে তার এই কর্ম।
চারপাশে সবুজ ধানখেত, পতাকার আদলে তৈরি করা হয়েছে চতুর্ভুজ ও বৃত্ত। জেলা শহর থেকেও মানুষ গিয়ে তুলছেন ছবি। সবুজে ঘেরা খেতে বেগুনী রঙের ধান যেমন বিস্ময় সৃষ্টি করেছে, সেই সাথে জাতীয় পতাকার আদলে মাঠ দেখে সবাই হচ্ছেন মুগ্ধ।
নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমি আগামীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ফুটিয়ে তুলতে চাই ধানখেতে। যাতে করে মানুষ ধানচাষের পাশাপাশি ধানখেত দেখে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এবারই প্রথম আমি বেগুনি রঙের ধানের চাষ করেছি। আমার এলাকার আরো অনেকেই এ বিষয়টি আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছেন। পাশের জমিগুলোসহ আগামীতে আমরা এই ধানের খেতেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে চাই।
জেলা শহর থেকে ঘুরতে আসা মেহেদী হাসান সাব্বির বলেন, এর আগে আমরা শস্যচিত্রে জাতির পিতার অবয়ব দেখেছি। নিজ এলাকায় ধানখেতে জাতীয় পতাকা আমাদের আবেগকে উদ্বোলিত করেছে। তাই বন্ধুদের নিয়ে দেখতে এসেছি।
জুলফিকার হাসনাত হাসু বলেন, নূরে আলম সিদ্দীকী একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। শখের বশে ধানখেতে জাতীয় পতাকার এই অবয়ব দেয়ার বিষয়টি নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রথম বেগুনি রঙের ধানের আবাদ শুরু হয় গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ধান। এ ধানের নাম ‘পার্পল লিফ রাইস’। এই ধানগাছের পাতা ও কাণ্ডের রঙ বেগুনি। এর চালের রঙও বেগুনি। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধানের পরিচিতি বেগুনি রঙের ধান বা রঙিন ধান।
চারপাশে সবুজ ধানখেতের চতুর্ভুজ ও মাঝখানে বৃত্ত আকৃতির বেগুনি রঙের ধানের আবাদ। চারদিকে বিস্তৃত সবুজ ধানখেতের মধ্যে বেগুনি রঙের এই ধানগাছ দেখে কেউ কেউ থমকে দাঁড়িয়ে জানার চেষ্টা করছেন, এটি কী ধান বা ধানের এমন অবস্থা কী করে হলো? অনেকেই তুলছেন সেলফি। কাছে গিয়ে জাতীয় পতাকার আদলে মাঠ দেখে আপ্লুতও হচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এর আগে কখনো এ উপজেলায় এ ধানের চাষ দেখেনি কেউ। বেগুনি রঙের ধান চাষ হওয়ার খবর শুনেছেন তারা। এই ধানের পুষ্টিমান বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু। এই ধান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। ফলন ভালো হলে উৎপাদিত ধানগুলো বীজ আকারে রাখা হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে ধানের আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
নদী বন্দর / এমকে