সুনামগঞ্জের শতাধিক হাওরেই বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ১১ উপজেলার প্রতিটি হাওরেই কমবেশি ধান কাটছেন কৃষক। গত ১ এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটার উদ্বোধন করেন। তবে কৃষকরা বলছেন, এবার মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধানের ফলন কম হচ্ছে। অনেকেই আবার শ্রমিক সংকটের কথাও জানিয়েছেন।
হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ ‘খাদ্য উদ্বৃত্ত’ জেলা হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত। স্থানীয় জনগণের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে আরও সমপরিমাণ ধান উদ্বৃত্ত থাকে জেলায়। এখন হাওরের চারদিকে কাঁচা-পাকা হলুদাভাব ধানের সমারোহ। বাতাসে দুলছে বিস্তৃত ধানক্ষেত। বোরো ক্ষেতের পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষক। গত ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত কৃষি বিভাগের হিসেবে ৩৭ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।
চলতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় দুই লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে দুই লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর। এরমধ্যে বিআর ২৮ ধান ৬৭ হাজার হেক্টর এবং বিআর ২৯ ৬৩ হাজার হেক্টর। বাকি ধান হাইব্রিডসহ কিছু দেশীয় প্রজাতির ধানও রয়েছে। এ বছর হাওরে ধান লাগানোর পর কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। যে কারণে ধানে চিটার পরিমাণ বেশি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এ কারণে ফলনে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ফলনে তেমন তারতম্য হবে না।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিন হাওরে গিয়ে দেখা যায়, হাওরের বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রশাসন ইতোমধ্যে ১০৭টি ধান কাটার যন্ত্র ভর্তুকিতে কৃষকদের দিয়েছে। সেই যন্ত্র দিয়েও অনেক স্থানে ধানকাটা চলছে। তাছাড়া সরকারিভাবে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিক নিয়ে আসা হচ্ছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে কৃষক স্বপণ কুমার র্বমন বলেন, হাওরে ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে কিন্তু দেশে লকডাউনের কারণে শ্রমকি পাওয়া কঠিন।
তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের কৃষক সোলেমান মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন ঝড়সহ শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। এ মুহূর্তে দ্রুত হাওরের ধান কাটতে না পারলে হয়তো জমিতেই এসব ধান নষ্ট হবে। কিন্তু এতো ধান কাটার শ্রমিক কই পাব?’
একই হাওরের কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘হাওরের ধান কাটা শুরু হয়েছে কিন্তু ঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট ধানগুলো রেখে ভালো ধান কেটে ঘরে তুলছি।’
কৃষক খালেদ মিয়া বললেন, ‘শনির হাওর অনেক বড় একটি হাওর। আমার জানা মতে, এই হাওরের ধান যদি ঠিকমতো ঘরে তোলা যায় তাহলে সারা বাংলাদেশের দুইদিনের চালের চাহিদা মেটানো যাবে। এতোবড় হাওরের ধান কাটতে প্রতি বছর শ্রমিক সংকটে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হলেও ধানের ফলনে তারতম্য হবে না বলে মন্তব্য করেন সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান।
তিনি বলেন, হাওরে ধানকাটা শুরু হয়ে গেছে। শ্রমিক সংকট দূর করতে সরকার ধান কাটার যন্ত্র দিয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় বাইরের জেলার শ্রমিককে নিয়ে আসা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আবহাওয়া যদি আমাদের অনুকূলে থাকে তাহলে আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে হাওরের সম্পূর্ণ ধান আমরা কেটে ফেলতে পারব। কারণ ধান কাটার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক এবং প্রতিটি হাওরের ধান কাটার মেশিন দেয়া হয়েছে। যদি হাওরের ধান কাটার জন্য আরও শ্রমিক প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা সেটা ব্যবস্থা করে দেব।’
নদী বন্দর / এমকে