ফরিদপুরে পদ্মার ভাঙন কবলিত চরভদ্রাসন উপজেলার পদ্মার চরের কৃষকদের বাদামগুলো পুড়ে যাচ্ছে খরায়। অনাবৃষ্টির কারণে ও সেচ ব্যবস্থার অভাবে শত শত কৃষকের ভাগ্য আজ বিপর্যয়ের মুখে।
জানা যায়, প্রতিমণ বাদামের বীজ ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। এছাড়া ক্ষেতের সার ও হাল ব্যয়সহ ক্ষেত পরিষ্কার করতে কৃষকের যে ব্যয় হয়েছে, তার পুরোটাই লোকসান হতে যাচ্ছে এবার।
নদীভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ পদ্মার চরে কৃষি ফসলের উপর নির্ভরশীল। যদিও সেখানে উন্নত প্রযুক্তির অভাব, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুপযোগী। অপরদিকে করোনায় সারাদেশ স্থবির। এ সময়ে কৃষকরা ভালো ফসল উৎপাদনের আশা ও ভালো দামে বিক্রি করার স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু খরা তাদের সে আশা ধ্বংস করে দিয়েছে।
চরভদ্রাসন এলাকার বাদাম চাষি পান্নু মোল্যার সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার তিন বিঘা জমির বাদাম প্রায় পুড়ে শেষ। প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে বাদাম লাগিয়েছিলাম। কিন্তু এখন কিছুই নাই।’
চাষি অভি খালাসীর স্ত্রী বলেন, ‘৪ বিঘা জমির বাদাম শেষ হয়ে গেছে।’ তার মতো এলাকার অনেক বাদাম চাষি এমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, ‘এ বিপদ কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে আমরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। করোনার এ মুহূর্তে সরকার আমাদের পাশে না দাঁড়ালে কিংবা আর্থিকভাবে সহযোগিতা না করলে আমাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না।’
জেলার খালাসি ডাঙ্গী ছাড়াও হাজি ডাঙ্গী, বাদুল্যা মাতুব্বরের ডাঙ্গী, কামার ডাঙ্গী, আব্দুল গফুর মৃধা ডাঙ্গী ও মাথাভাঙ্গায় অনেক চাষির একই অবস্থা। এছাড়া বোয়ালমারীর লংকার চর, আলফাডাঙ্গা এলাকার পাচুড়িয়া, চর পাচুড়িয়া, বেড়িরহাট এলাকায়ও বাদামের একই অবস্থা।
চরভদ্রাসন উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতাব মন্ডল বলেন, ‘প্রায় ৪ মাস অনাবৃষ্টির ফলে বাদাম পুড়ে গেছে। এ বিষয়ে আমরা অবগত আছি। আমরা তাদের জন্য পাম্প স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চাষিদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা জানাবো।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, ‘জেলায় এ বছর ৫ হাজার ৯৫২ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। বর্তমানে অনেক ফসল সেচ দিয়ে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু বাদাম এমন একটা ফসল, যেখানে সেচের উপায় থাকে না। এতে তো আর মানুষের হাত নেই। কী আর করা? বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
নদী বন্দর / এমকে