1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
শিশুকে কোন বয়সে কী খাবার দিতে হবে - Nadibandar.com
মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ১১২ বার পঠিত

শিশুর খাবার নিয়ে মা-বাবার ভাবনার শেষ নেই। শিশুকে কোন বয়সে কোন খাবার দিতে হবে, তা নিয়ে ধারণা থাকা জরুরি। শিশুর জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই একমাত্র ও আদর্শ খাবার। এসময় অন্য কোনো খাবার এমনকি পানি পান করানোরও কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। ছয় মাস পর থেকে শিশুর পুষ্টিচাহিদা পূরণে তথা স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার খাওয়ানো দরকার। তবে শিশুর দুই বছর বয়স পর্যন্ত দুধ হিসাবে মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো দুধ বা কৌটার দুধ খাওয়ানোর দরকার নেই। মায়ের দুধে সব ধরনের খাদ্য উপাদানই থাকে। এ ছাড়া জন্মের পরপরই মায়ের স্তন থেকে যে হলুদ রঙের শালদুধ নিঃসরণ হয়, তা নবজাতকের রোগ প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে এ শালদুধ খাওয়ানো নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। কিন্তু এ কথা স্মরণ রাখতে হবে, শালদুধই শিশুর জন্য প্রথম প্রতিরক্ষা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মায়ের দুধ সহজপাচ্য, বিশুদ্ধ এবং এতে রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান থাকে বলে যেকোনো সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। মায়ের দুধ পানকারী শিশুর হাঁপানি, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, স্থূলতা, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, কানের প্রদাহ, ডায়রিয়া, বমি, সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম ইত্যাদির আশঙ্কা কম থাকে। যে মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ পান করান; তাদেরও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। কিন্তু বাজারে যেসব শিশুখাদ্য পাওয়া যায়, সেগুলো মায়ের দুধের মতো এতটা সুরক্ষা দিতে পারে না। ফলে এসব ফর্মুলা দুধ পান করালে শিশু ও নবজাতকের নানা রকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নবজাতককে দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরি। নবজাতকের পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর আগে মাকে এক থেকে দুই গ্লাস পানি অথবা তরল খাবার খেতে হবে। দুধ খাওয়ানোর সময় কোনো রকম তাড়াহুড়া করা যাবে না। প্রশান্ত মনে ও ধৈর্যসহকারে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। মা বসে খাওয়াতে চাইলে মায়ের পিঠের পেছনে এবং কোলের নিচে বালিশ নিয়ে আরাম করে বসতে পারেন। শুয়ে খাওয়াতে চাইলে শিশুকে মায়ের দিকে পাশ ফিরিয়ে এমনভাবে শুইয়ে দিতে হবে, যেন মা হাত দিয়ে শিশুর পশ্চাদ্দেশ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেন। শিশুর নাক যেন চাপে না পড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর সময় একটি স্তন থেকেই ভালোভাবে খাওয়াতে হবে। কারণ একই স্তন থেকে প্রথমদিকে পাতলা এবং পরে ঘন দুধ বের হয়। দুই ঘণ্টা পরপর শিশুকে বুকের দুধ দিতে হবে। তবে রাতে ঘুমানোর সময় একটানা চার ঘণ্টা বিরতি দিলেও কোনো সমস্যা নেই। কর্মজীবী মায়েরা কাজে থাকাকালীন শিশুর যাতে বুকের দুধের অভাব না হয়, সে জন্য বুকের দুধ সংরক্ষণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কাজ থেকে ফিরে যতবার শিশুকে দুধ খাওয়াবেন, ততবার স্তন থেকে দুধ পাম্প করে তা ফ্রিজে সংরক্ষণ করবেন। তবে ফ্রিজ থেকে সাথেসাথেই বের করে ঠান্ডা দুধ শিশুকে দেওয়া যাবে না। একটি পাত্রে গরম পানিতে দুধের পাত্র রেখে নেড়ে নেড়ে শিশুর খাওয়ার জন্য সহনীয় তাপমাত্রায় আনতে হবে।

এ ছাড়া মা যদি করোনা সংক্রমিত হন, সেক্ষেত্রেও কিন্তু শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোয় কোনো বাধা নেই। এরকম ক্ষেত্রে মা ভালো করে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে মাস্ক পরে শিশুকে দুধ পান করাবেন। তবে মা যদি সক্রিয় যক্ষ্মা, এইডস, হিউম্যান টি সেল লিম্ফোট্রফিক ভাইরাস ইত্যাদিতে সংক্রমিত থাকেন কিংবা কোনো মাদকদ্রব্য সেবন করেন বা ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপি চিকিৎসা নেন, তাহলে শিশুকে স্তন্যদান থেকে বিরত থাকা উচিত। শিশু যদি গ্যালাক্টোসেমিয়া, ফিনাইলকিটোনিউরিয়া বা ম্যাপল সিরাপ ইউরিন ডিজিজ ধরনের জন্মগত মেটাবলিক রোগে ভোগে, তাহলেও শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এরকম ক্ষেত্রে শিশুকে বিশেষায়িত ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।

ছয় মাস থেকে এক বছর বয়সী শিশুদের মায়ের দুধের পাশাপাশি তিন বেলা বাড়তি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। তবে এ বয়সেও শিশুর মূল খাবার মায়ের দুধ। অর্থাৎ বাড়তি খাবারের পরিমাণ হবে কম। তিন বেলা খাবারের মধ্যে দুই বেলা খিচুড়ি বা নরম ভাতের মতো একটু ভারি খাবার দেওয়া যেতে পারে। বাকি এক বেলা হালকা কোনো খাবার (ফলের রস বা নরম ফল, যেমন- কলা) দিতে পারেন। আধা সেদ্ধ ডিম, সবজির স্যুপ বা ছোট মুরগির স্যুপও শিশুর জন্য উপকারী। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানমিশ্রিত খাবার বাইরে থেকে কিনে আনার চেয়ে ঘরেই বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে সুস্বাদু খাবার তৈরি করে দেওয়া ভালো। এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের দুধের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে হবে। এ বয়সে বাড়তি খাবার প্রয়োজন দিনে পাঁচবার। কোনো অবস্থায়ই শিশুকে জোর করে বেশি পরিমাণ খাবার দেওয়া ঠিক নয়। বাড়ন্ত শিশু কোনো একটি খাবার খেতে পছন্দ না করলে, সেটির পরিবর্তে একই পুষ্টিমানের অন্য খাবার দেওয়া যেতে পারে।

jagonews24

যে শিশু খিচুড়ি খেতে চায় না, তাকে নরম ভাতের সঙ্গে ডাল, সবজি, মাছ বা মাংস ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে দিতে পারেন। শিশুকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশুকে গরুর দুধ বা কৌটার দুধ খাওয়ানো যাবে না। শিশুকে শক্ত খাবার, যেমন বিস্কুট বা শক্ত ভাত দেওয়া ঠিক নয়। শক্ত খাবার খেতে গেলে শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে। একটু একটু করে শিশুর খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রথমদিকে প্রতি বেলায় স্যুপের বাটির এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ খাবার দেওয়া যেতে পারে। ধীরে ধীরে খাবারের পরিমাণ আধা বাটি, পৌনে এক বাটি এবং এভাবে এক বাটি পর্যন্ত আনা যেতে পারে। উদ্ভিজ আমিষ শিশুর জন্য বেশি উপযোগী। তাই মাছ বা মাংস শুরু করার আগে শিশুর খাবারে ডাল যোগ করুন।

খিচুড়ি তৈরি করতে সমপরিমাণ চাল ও ডাল নেওয়া উচিত। ছয় মাস বয়সী শিশুকে সামান্য ডিমের কুসুম দেওয়া যায়, এরপর কুসুমের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। সেদ্ধ বা পোচ করা ডিমের কুসুম, দুটিই শিশুর উপযোগী। এর বেশ কিছুদিন পর থেকে ডিমের সাদা অংশ খাওয়ানো শুরু করতে পারেন। ছয় মাস বয়স থেকে শিশুকে পানি পান করানো উচিত। নুডলস স্যুপ বা জাউভাতও দিতে পারেন শিশুকে। যেকোনো একটি খাবার শুরু করার পর একটানা তিন থেকে পাঁচ দিন খাবারটি দেওয়া উচিত। ওই খাবারে শিশুর অ্যালার্জি আছে কি না বা সেটি খেলে শিশুর অন্য কোনো সমস্যা হয় কি না, তা এ সময়ের মধ্যেই ধরা পড়বে।

টকজাতীয় ফল শিশুদের দেওয়া ঠিক নয়। নয় মাস বয়সের আগে শিশুদের টকফল দেওয়া উচিত নয়। মিষ্টি ফলগুলো শিশুদের জন্য বেশি উপযোগী। শিশুদের খাবারে বেশি লবণ দেওয়া ঠিক নয়। আর চিনির পরিবর্তে মধু বা গুড় ব্যবহার করা ভালো। গড়ে এক বছর বয়সের মধ্যেই শিশু পরিবারের বাকিদের মতো খাবার খেতে পারে, তবে এটি নির্ভর করে শিশুর দাঁত ওঠার সময়ের ওপর। যে শিশুর আগে দাঁত উঠবে, সে একটু আগে আগেই স্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত হতে পারবে। আর যেসব শিশুর দাঁত উঠতে একটু দেরি হয়, তাদের সম্পূর্ণ স্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগলেও ভয়ের কিছু নেই।

তাই অযথা চিন্তা না করে শিশুর পুষ্টিচাহিদা পূরণে শিশুর পিতা-মাতার সজাগ ভূমিকা পালন করা অনস্বীকার্য। তবেই আমরা পাবো একটি সুস্থ ও নীরোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। যাদের মাধ্যমে রচিত হবে আমাদের সমৃদ্ধির পাথেয়।

নদী বন্দর / এমকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com