উত্তরের আমের রাজধানী নওগাঁ। গাছে গাছে দুলছে চাষিদের স্বপ্ন। কিন্তু প্রকৃতিতে বইছে তীব্র খরা। তীব্র দাবদাহে ছোট হয়ে আসছে আম। বোঁটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। রোগবালাই দেখা দিয়েছে আমে। প্রতিষেধক দেয়া হলেও ফের পোকার উপদ্রব দেখা দিচ্ছে। সুফল না পাওয়ায় কপালে পড়ছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে পোরশা উপজেলায় ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর, সাপাহারে ৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর, পত্মীতলায় তিন হাজার ১৫ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে একহাজার ১৩০ হেক্টর। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় স্বল্প পরিমাণ আমের উৎপাদন হয়ে থাকে। আমের মধ্যে জাত ভেদে জেলায় মোট আম্রপালি ১০ হাজার ৬৩০ হেক্টর, গোপালভোগ চার হাজার ৮০ হেক্টর, খিরসাপাত তিন হাজার ৮৯০ হেক্টর, ল্যাংড়া তিন হাজার ৭৫ হেক্টর এবং নাখফজলি এক হাজার ৫৪৫ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। যেখানে গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১২ মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদন হয়েছিল।
জেলার সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলায় পানি স্বল্পতার কারণে বছরের একটিমাত্র ফসল আমনের ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে ধানের আবাদ ছেড়ে আম চাষের দিকে ঝুঁকেছেন চাষিরা। পোরশা ও সাপাহারে উপজেলায় প্রায় তিনশতাধিক মৌসুমি আমের আড়ৎ গড়ে ওঠে। যেখান থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। এখানে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আম বেঁচাকেনা হয়ে থাকে।
চাষিরা বলছেন, অতিরিক্ত খরায় আমে বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। আমে হপার ও মাকর পোকার আক্রমণ খুব বেশি। পোকামাকড়ের আক্রমণে কালো হয়ে যাচ্ছে। প্রতিষেধক ব্যবহার করা হলেও কিছুদিন আবারও পোকার উপদ্রব দেখা দিচ্ছে। এবার অনাবৃষ্টির কারণে আমের ফলন কম হবে।
পোরশা উপজেলার সরাইগাছী এলাকার চাষি আনিছুর রহমান বলেন, তিনি এবছর প্রায় ১৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আম্রপালি চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমির ইজার মূল্য পড়েছে গড়ে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া শ্রমিক, সার ও কীটনাশকসহ এখন পর্যন্ত আনুষঙ্গিক খরচ পড়েছে বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা। শুরুতে গাছে আমের গুটি ভাল ছিল। কিন্তু প্রচণ্ড খরায় আম বাড়ছে না বরং ঝরে পড়ছে।
পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম বলেন, প্রথম দিকে আমে ভাল গুটি এসেছিল। তীব্র দাবদাহে আমের গুটি ঝরে পড়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। তবে গত কয়েকদিন আগে প্রায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মাটিতে রস এসেছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, কৃষি অফিস থেকে চাষিদের নানাভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে করে আমে দাগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। এছাড়া যদি বৃষ্টি হয় তাহলে আম ঝরে পড়ার প্রবণতা থাকবে না। এতে আমের ভাল ফলনের আশা করছি। কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন। এছাড়া আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে আম আসা শুরু করবে।
নদী বন্দর / জিকে