দুই মাস পর পহেলা মে থেকে চাঁদপুরের মেঘনায় মাছ ধরতে নামবেন জেলেরা। মার্চ-এপ্রিল এই দুইমাস নদীতে না নামলেও এখন পুরোদমে প্রস্তুত তারা। এ নিয়ে জেলে পাড়ায় চলছে উৎসবের আমেজ। যদিও নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে কিছু অসাধু জেলে সরকারি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে নদীতে নেমেছিলেন।
২০০৬ সাল থেকে মার্চ-এপ্রিল এ দুই মাস চাঁদপুরের মেঘনায় চলে অভয়াশ্রম। নির্দিষ্ট এ সময়ে পদ্মা-মেঘনার মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার এলাকায় নদীতে জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। যার মধ্যে চাঁদপুরের রয়েছে ৬০ কিলোমিটার এলাকা। আর নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫১ হাজার জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাই দীর্ঘদিন অলস সময় কাটিয়ে ও বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে এখন নদীতে নামতে প্রস্তুত চাঁদপুরের অর্ধলক্ষাধীক জেলে।
সরেজমিনে বুধবার হরিনা ঘাট লক্ষ্মীপুর পুরানবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে নামতে ইতোমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন জেলেরা। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। নৌকা, জাল ও ইঞ্জিনের মেরামতসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করছেন তারা। সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের জেলে খোরশেদ গাজী জানান, গত দুই মাস আমরা ঘরে বসে সময় কাটিয়েছি। তারউপর লকডাউন ছিল। ধারদেনা করে নৌকা ও জাল মেরামতের কাজ করেছি। উপরওয়ালাই ভালো জানে নদীতে মাছ পাওয়া যাবে কিনা।
হরিনা ঘাট এলাকার জেলে আব্দুস সাত্তার মিয়া জানান, এই দুই মাস আমাদের খুবই কষ্টে কাটাতে হয়েছে। একেত লকডাউন তারউপর ডাঙ্গার কোনো কাজ আমরা জানি না। তাই উদগ্রীব হয়ে আছি কখন নদীতে নামব। নদীতে মাছ পাওয়া গেলে সন্তানদের নিয়ে দু’মুঠো খেতে পারব। না হলে ঋণের বোঝা আরও ভারী হবে।
এদিকে দুই মাস অভয়াশ্রম কর্মসূচি সফল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। এরপরও কিছু কিছু জেলে নদীতে নেমে জাটকা ধরেছে। যদিও কার্যক্রম বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিরাও ছিলেন সজাগ।
জাটকা নিধন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান জাহান আলী কালু জানান, অভয়াশ্রম বাস্তবায়নে আমরা নির্দিষ্ট সময়ে জেলেদের জন্য ভিজিএফের বরাদ্দকৃত চাল তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। এছাড়া নদীতে যাতে কোনো জেলে নামতে না পারে সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রেখেছি এবং প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করেছি। আশা করছি অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও ইলিশের প্রাপ্যতা বাড়বে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী জানান, এ বছর কর্মসূচি প্রায় শতভাগ সফল হয়েছে। এছাড়াও আগামী জুন মাস পর্যন্ত জাটকা রক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে। এতে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে। অভয়াশ্রমের সময় প্রায় পাঁচ শতাধিক জেলেকে জেল জরিমানা করা হয়েছে এবং সাড়ে ৪০০ কিশোর জেলেকে জরিমানা করে ও মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর ইলিশের দাম মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকবে এবং বছরের পর বছর ইলিশ উৎপাদনের যে ধারাবাহিকতা তা অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য চাঁদপুর মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর কর্মসূচি সফল করতে এ পর্যন্ত ৫৫৮টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে প্রায় ৪০ টন জাটকা ও আড়াই কোটি মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ ও উত্তর উপজেলার ৫১ হাজার ১৯০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তালিকাভুক্ত এসব জেলেকে এ সময় চার ধাপে ৪০ কেজি করে ভিজিএফের চাল প্রদান করা হয়েছে।
নদী বন্দর / পিকে