চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলায় ভুট্টাচাষে পাল্টে গেছে অনেক কৃষকের ভাগ্য। বদলে দিয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র। এক সময় শুধু ইরি-বোরো ও আমন চাষের পাশাপাশি প্রচলিত কিছু শাক-সবজি চাষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কৃষিকাজ। কিন্তু এখন আধুনিক পদ্ধতিতে ভুট্টাচাষ করে কৃষকরা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন।
ভুট্টাচাষে সাফল্য এখানকার কৃষকদের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। কৃষকদের কাছে ভুট্টাচাষ এখন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অল্প সময়ে স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ করা যায় বলে প্রতিবছরই ভুট্টা চাষে মেতে উঠছেন এখানকার কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার ব্যাপক পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, গত বছর ভুট্টার দাম বেশি পাওয়ায় উপজেলার কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা চাষের দিকে ব্যাপকভাবে ঝুঁকেছেন।
জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের ভুট্টাচাষি আব্দার হোসেন জানান, আজ থেকে ১৭ বছর আগে এ এলাকায় প্রথম তিনি ভুট্টাচাষ শুরু করেন। ওই বছর তিনি এক বিঘা জমিতে ৩ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদিত ভুট্টা প্রায় ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ফলে অধিক পরিমাণ লাভ হওয়ায় পরের বছর তিনি জমির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেন। এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ৫ বিঘা জমিতে উৎপাদিত ভুট্টা তিনি দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
তিনি জানান, কার্তিক মাসের শেষে ভালোভাবে জমি কর্তন ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে জমিকে ভুট্টা চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। জমিতে বীজ বপনের ১০ থেকে ১৫ দিনের মাথায় চারা গজায়। ৬ মাসের মাথায় জমি থেকে গাছ কেটে ভুট্টা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিবিঘা জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ মণ ভুট্টা উৎপাদিত হয়। জমি তৈরি থেকে ভুট্টা সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর উৎপাদিত ভুট্টা বিক্রি হয়ে থাকে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে লাভ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
উথলী গ্রামের ভুট্টাচাষি সামাদুল জানান, গত বছর ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। সেই আসায় এবার সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, ভুট্টা এই জেলায় অর্থকারী ফসল। এরসাথে প্রায় আড়াই লাখ চাষি জড়িত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে কৃষকরা যদি ভুট্টা সংরক্ষণ করতে পারতেন তাহলে আরও বেশি লাভবান হতেন।
নদী বন্দর / পিকে