খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিভিন্ন খেতে শতকোটি টাকা মূল্যের তরমুজ পচনের ঝুঁকিতে পড়েছে। ব্যাপারীদের সিন্ডিকেট, পাইকারি বাজারে দরপতন আর অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন তরমুজ চাষিরা। রাজধানী ঢাকায় তরমুজের রীতিমতো অগ্নিমূল্য হলেও ‘চাহিদা নেই’ এমন অজুহাতে তরমুজ কেনায় কৃত্রিম অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন ব্যাপারীরা। চাষিদের অভিযোগ, পচে যাওয়ার ভয়ে স্বল্প দামেই যেন তারা তরমুজ ছেড়ে দেন সেই জন্যই কিছুদিনের জন্য সিন্ডিকেট করে ‘গা ঢাকা’ দিয়ে থাকছেন ব্যাপারীরা। এতে অনেকে সব হারানোর চেয়ে কিছু পাওয়ার আশায় দেনদরবার করে অল্প দামে তরমুজ ছেড়ে দেন।
চলতি মৌসুমে বটিয়াঘাটা উপজেলায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়। অনাবৃষ্টি, তীব্র রোদ আর শ্রমিকের মূল্য পেরিয়ে খেতে বাম্পার ফলন দেখা গেলেও হঠাত্ দরপতনে দিশেহারা কৃষক। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত মাঠের তরমুজ বিক্রি করা না গেলে চাষিদের ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে। একদিকে ব্যাংক ঋণ, অন্যদিকে মহাজনের সুদের টাকা পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। গতকাল সরেজমিনে গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের ঝড়ভাঙ্গা বিলে গিয়ে দেখা যায়—হাজার হাজার তরমুজ খেতে পড়ে আছে। চাষিরা অপেক্ষায় রয়েছেন কখন ব্যাপারীদের ট্রাক প্রবেশ করবে। অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ, কাতিয়ানাংলা বাজার, বরণপাড়া খেয়াঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে তরমুজের ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ফড়িয়ারা খেতের মূল্য অর্ধেকে নামিয়ে এনেছেন।
ঝড়ভাঙ্গা গ্রামের তরমুজচাষি কলেজছাত্র মৃত্যুঞ্জয় রায় জানান, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে দেড় লাখ টাকা খরচ করে তরমুজের চাষ করেন। তার আশা ছিল ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন। তরমুজ খেতে নষ্ট হওয়ার ভয়ে মাত্র আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।
বিজয় মণ্ডল জানান, তিনি আট বিঘা জমিতে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ করে তরমুজ চাষ করেন। খেতে তরমুজ নষ্ট হতে চলেছে। ফড়িয়াদের খোঁজ নেই। দুয়েক জন এলেও যে দর বলছে তাতে চাষখরচ উঠবে না। একই ভাবে টেংরামারী গ্রামের সমর মণ্ডল দুই বিঘা জমি চাষ করেন ৯০ হাজার টাকায়। বিক্রি হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আন্ধারিয়া গ্রামের শংকর মণ্ডল, আমতলার ফেরদাউস, টেংরামারীর দেবু মণ্ডল, রবিউল আলম, মলয় মিস্ত্রি, আমতলার তুফান ফারাজিসহ অনেক চাষিই অভিযোগ করে বলেন, তীব্র রোদ-পানির অভাবসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তারা তরমুজের চাষ করেন। ঢাকার কাওরান বাজার আড়তে ট্রাকভরে তরমুজ পাঠালেও এখনো বিক্রির টাকা হাতে পাননি, আবার না পাঠালে খেতেই ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। তারা জানান, প্রথম দিকে প্রতি এক বিঘার খেত বিক্রি হয়েছে দেড় থেকে ২ লাখ টাকায়। এখন লোকসানের মধ্যে পড়েছি।
খেতে উপস্থিত নওগাঁ জেলার নজিরপুর বাজারের আড়তদার আব্দুল হামিদ, বরিশালের সোহাগ খান, সিরাজগঞ্চের নজরুল শেখ বলেন, তারা প্রতি বছর ট্রাকযোগে খেত থেকে তরমুজ নিয়ে যান। এ বছর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারণে তরমুজ বিক্রিতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। খেত ধরে তরমুজ কিনে নিয়ে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে লোকসানে পড়তে হয়। তাই ফড়িয়ারা আসছেন না। বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত আর মিডিয়ায় অপপ্রচারের কারণে ফড়িয়ারা কম আসায় কৃষকদের লাভ কম হচ্ছে, তবে লোকসান হবে না।
নদী বন্দর / পিকে