কঠোর লকডাউন আর সোমবারের ভয়াবহ স্পিডবোট দুর্ঘটনার পরও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে চলছে স্পিডবোট ও বাল্কহেড। মঙ্গলবার সকালে শিমুলিয়া ঘাট থেকে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে একটি স্পিবোট ছেড়ে আসে। তবে রাতে শিমুলিয়া ঘাট থেকে অহরহ স্পিডবোট চলাচল করছে বলে ফেরির যাত্রীরা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সরেজমিনে বাংলাবাজার ঘাটে গেলে দেখা যায়, শিমুলিয়া ঘাট থেকে ওইদিন সকালেও বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে একটি স্পিডবোট ছেড়ে আসে। ওই স্পিডবোটে মাত্র অল্প কয়জন যাত্রী ছিল। তবে নদীর মধ্যে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু পরিবহনের বাল্কহেড চলছে অহরহ।
যাত্রীরা জানান, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে চলাচলকারী স্পিডবোটের চালকরা শুধু অদক্ষই নয়, ছিনতাই, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িত তারা। তাদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ। মালিকরা অল্প বেতন দিয়ে চালক রাখেন। যখন যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়েই স্পিডবোট চালান।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গত এক বছরে প্রায় ১০ থেকে ১২টি স্পিডবোট দুর্ঘটনা ঘটেছে এ রুটে। ইতোপূর্বে যাত্রীদেরকে চরের মধ্যে নিয়ে টাকা-পয়সা ছিনতাইসহ ধর্ষণের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে চালকদের দ্বারা। ওই সকল অপ্রীতিকর ঘটনায় শিবচর থানায় মামলাও হয়েছে।
বাংলাবাজার ঘাট স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, বাংলাবাজার ঘাট থেকে স্পিডবোট চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ সম্প্রতি ৩৯ জনের একটি তালিকা নিয়েছে। লকডাউনের কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, লকডাউনের শুরু থেকেই বাংলাবাজার ঘাট কর্তৃপক্ষ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখে। অনিয়মের খবর পেলে মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। সেদিনের দুর্ঘটনায় জীবিত ৩ যাত্রীর সাথে কথা বলেছি তারা সবাই জানিয়েছেন, স্পিডবোটের চালক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল। নদীর মধ্যে একবার দুর্ঘটনার উপক্রম হয়েছিল। বেপরোয়া ও নিয়ন্ত্রণহীন স্পিডবোট চালানোর কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
চরজানাজাত নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আ. রাজ্জাক মিয়া জানান, এ পর্যন্ত যে সকল দুর্ঘটনা ঘটেছে তার কোনো তথ্যই আমাদের নৌ-ফাঁড়িতে নেই। তবে কোনো অনিয়মের খবর পেলে আমরা সেখানে ছুটে যাই। এ ঘটনা তদন্ত করবে নৌপুলিশ।
শিবচর থানার ওসি মো. মিরাজ হোসেন জানান, এ ব্যাপারে চরজানাজাত নৌপুলিশ ফাঁড়ির এসআই লোকমান হোসেন বাদী হয়ে শিবচর থানায় ৪ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে মামলা করেছেন। এছাড়া আরো অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। যেহেতু দুর্ঘটনাটি নৌপথে সংঘঠিত হয়েছে সেহেতু মামলাটি তদন্ত করবে নৌপুলিশ।
শিবচর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমির হোসেন সেরনিয়াবাত জানান, স্পিডবোট ও বাল্কহেড সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় শিমুলিয়া ঘাটের ইজারাদার, বোটের মালিক-চালকসহ চারজনের নামে মামলা হয়েছে। শিবচর থানায় সোমবার গভীর রাতে মামলাটি করেন নৌপুলিশের এসআই লোকমান হোসেন।
ওই মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন- স্পিডবোট চালক নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার অবুল কালাম মুন্সীর ছেলে শাহ আলম (৩৮), স্পিডবোটের মালিক মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের চান্দু মোল্লা (৩৫), মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের রেজাউল হক (৩২) এবং শিমুলিয়া ঘাটের ইজারাদার মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শাহ আলম খান (৪০)। তবে এ পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ।
নদী বন্দর / জিকে