চলমান লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝিরা। তবে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসছে না কেউ। তাদের রক্ষায় প্রশাসনেরও নেই কোনো উদ্যোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জয়নুল আবেদীন পার্ক এলাকায় সারিন্দার ঘাট, জয়নাল আবেদিন ঘাট, বেলির ঘাট এলাকায় মোট নৌকা আছে ৬৫টি। আর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ঘাটে নৌকা আছে ২৫টি, সিলভার ক্যাসেল ঘাটে আছে ২০টির মতো নৌকা।
জয়নুল আবেদীন পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা এসব নৌকা দিয়ে নদীতে ঘুরাফেরা করতেন।
এছাড়া গ্রাম থেকে শহরে আসা লোকজনের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদ পারাপারের জন্য কাচারীঘাট ঘাট, থানার ঘাট, জেলখানার ঘাট, খাগডহর রয়েছে। এসব ঘাট থেকে নৌকা দিয়ে নিয়মিত কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়। এ তিনটি ঘাটে ৩৫টির মতো নৌকা আছে।
বুধবার (৫ মে) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল আবেদীন পার্ক এলাকায় গিয়ে দেখা যায় রাব্বি মিয়া নামের এক কিশোর মাঝি নৌকায় ঘুমাচ্ছেন। তাকে ডাক দিতে তাড়াহুড়া করে উঠে জিজ্ঞাসা করেন, ‘স্যার কোথায় যাবেন? নৌকায় উঠেন’।
নৌকায় উঠে নাম কি জানতে চাইলে সে জানায়, আমার নাম রাব্বি। আগে বাবা নৌকা চালাতো। করোনার সময় ভাড়া না থাকায় নৌকা চালানো ছেড়ে দিয়েছেন বাবা। এরপর থেকে আমি নৌকার মাঝি হিসাবে কাজ করছি।
সে আরও জানায়, বাবা এক দেড় বছর আগে ২০ হাজার টাকা দিয়ে নৌকা কিনেছে। এরপর থেকে করোনার শুরু। নৌকা চালিয়ে সংসার চলে না। তাই বাবা ঢাকার একটি গরুর ফার্মে চাকরি নিয়েছে। এখন আমরা খুব অভাবে আছি। সরকার যদি একটু সহায়তা করতো তাহলে ভাই-বোন নিয়ে ভালো করে ঈদ করতে পারতাম।
চর বিনপাড়ার মো. ইসমাইলের ছেলে মো. রিফাত বলেন, করোনার লকডাউনের কারণে লোকজন নেই। তাই বাবা নৌকা চালাতে আসেন না। এখন আমার আয়েই সংসার চলে। আগে দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা রোজগার করতে পারতাম। আর এখন দৈনিক ১০০-২০০ টাকা আয় হয়। এতে সংসার চলে না।
ওই গ্রামের হাসেম মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া বলেন, ৯ বছর ধরে নৌকা চালাই। করোনার আগে ৪০০-৫০০ টাকা, আর এখন ১০০-১৫০ টাকা আয় হয়। সংসার চলে না, খুব কষ্টে আছি।
কাঁচারীঘাটের মাঝি হামিদুল ইসলাম বলেন, করোনার আগে সপ্তাহে ছয়দিন নৌকা চালিয়ে জনপ্রতি ৭০০ টাকা করে পেতাম। এখন সপ্তাহে দুইদিন নৌকা চালিয়ে ৩৫০ টাকা করে পাই। বউ বাচ্চা নিয়ে খুব বিপাকে আছি।
ওই ঘাটের মাঝি দুদু মিয়া বলেন, করোনার পর থেকে আমরা মাঝিরা কোনো সহায়তা পাইনি। সরকার যদি ঈদের আগে কিছু সহায়তা করে তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ কাঁটাতে পারব।
নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফারুক হোসেন বলেন, করোনার আগে প্রতি মাঝি দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা রোজগার করতেন। এখন দৈনিক ১৫০-২০০ টাকা রোজগার হচ্ছে। এতে তারা পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
কাচারীঘাটের নৌকা চলাচল নিয়ন্ত্রন কমিটির ম্যানেজার কালাম মিয়া বলেন, এখনো সরকারের পক্ষ থেকে একটি মাস্কও পাওয়া যায়নি। মালিকপক্ষ থেকে কিছু সহায়তা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া সকলেই যেন সরকারি সহায়তা পায়। সেজন্য আলোচনা চলছে।
নদী বন্দর / এমকে