রাজশাহীতে প্রতিবছর খরা মৌসুমে পানির সঙ্কট দেখে দিতো পুঠিয়ার বারনই নদীতে। চাষের জন্য পাওয়া যেতো না পানি। বর্তমানে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের (বিএমডিএ) একটি রাবার ড্যাম বদলে গেছে পুঠিয়ার হাজারো চাষির ভাগ্য।
জানা যায়, এর আগে পানির অভাবে পুঠিয়ার ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চাষিদের ফসলের ক্ষতি হতো প্রতিবছর।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পুঠিয়া উপজেলা শাখার সহকারী প্রকৌশলী আল মামুন উর রশিদ বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে রাবার ড্যামটি নির্মাণ করে বিএমডিএ। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শিলমাড়িয়া ইউপি এলাকায় বারনই নদীতে এ ড্যামের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ড্যামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এতে নির্মাণ ব্যয় হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
পুঠিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাবার ড্যামটির দৈর্ঘ্য ৬২ মিটার ও উচ্চতা সাড়ে চার মিটার। ড্যামটির পানি ধারণ ক্ষমতা ১২০ লাখ ঘনমিটার।
ড্যামটির ফলে নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছয় হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষিজমি সেচের আওতায় এসেছে। আর এর সুফল ভোগ করছেন তিনটি উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার ৪৩ হাজার ৫০০টি পরিবার।
পুঠিয়ায় রাবার ড্যাম নির্মাণের বিষয়ে সাধনপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফিরোজ মান্নান বলেন, খরা মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষিদের প্রধান সমস্যায় ছিল পানি সঙ্কট। ড্যাম নির্মাণের পর চাষিরা এখন জমিতে তিনটি করে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন। নদীর পানি ব্যবহার করে উঁচু জমিগুলোতে ১২ মাস বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় চাষি ছবির উদ্দীন বলেন, ড্যাম নির্মাণের আগে খরা মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ তেমন থাকতো না। এতে নদীর আশপাশের এলাকায় পানির স্তরও অনেক নিচে নেমে যেত। সেচকাজে ব্যবহৃত বেশিরভাগ বোরিং পাইপের পানি উঠানোর কাজ বন্ধ থাকতো। ফলে জমিগুলোতে ফসল উৎপাদন ছিল বৃষ্টি নির্ভর।
প্রতিবছর পানি সঙ্কটে এ এলাকার অধিকাংশ চাষিদের ফসল ক্ষেতেই শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যেত। ড্যাম নির্মাণের পর থেকে নদীতে এখন সবসময় পানি থাকে। বোরিংগুলোতে আগের মত পানির সঙ্কট দেখা যায় না।
শিলমাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল বলেন, হাজারো চাষির দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ইউনিয়নের জগদেশপুর এলাকায় রাবার ড্যামটি নির্মাণ করা হয়। ফলে বারনই নদীর তীরবর্তী পুঠিয়া, বাগমারা, দুর্গাপুর অঞ্চলের চাষিদের ভোগান্তি কমেছে। এখন ড্যামের মাধ্যমে নদীতে পানি ধরে রাখা যায়।
পুঠিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভূইয়া বলেন, বিগত বছরগুলোতে পানি সঙ্কটের কারণে নদী তীরের জমিতে এক-দুইটি ফসল উৎপাদিত হতো। চাষিদের সমস্যা নিরসনে কৃষি মন্ত্রণালয় বারনই নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। এখন বছরের খরা মৌসুমে নদীতে পর্যাপ্ত পানি মজুত থাকে। আর জমাকৃত এ পানি ফসলি জমিতে গুরুতপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নদী বন্দর / এমকে