রংপুরের বিখ্যাত হাঁড়িভাঙা আমের বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মানিকগঞ্জের কয়েকজন যুবক। এ বছর তাদের বাগানে আমের ফলনও অনেক ভালো। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এই আমের স্থানীয়ভাবে চাহিদাও অনেক। তাই এলাকায় দিন দিন বাড়ছে বাগানের সংখ্যা।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের হাটিপাড়া (পাওনান) গ্রাম। এই গ্রামের প্রবাসফেরত রোমান মিয়ার মাধ্যমেই শুরু হয় হাঁড়িভাঙা আমের চাষ।
একসময় সৌদি আরব থাকতেন রোমান। ছুটিতে এসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। প্রায় বছর খানেক চিকিৎসার পর সুস্থ হলেও শুরু হয় বেকার জীবন। এরপরই উদ্যোগ নেন আম বাগান করার।
রংপুর থেকে চারা সংগ্রহ করে ৪০ শতাংশ জমিতে ৪৮টি গাছ দিয়ে বাগান শুরু করেন তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। হাড়ি ভাঙ্গা আমের বাগান করে এখন তিনি সফল। বেকারত্ব ঘুচিয়ে হয়েছেন স্বাবলম্বী।
রোমান মিয়া বলেন, ‘আমি আগে বেকার ছিলাম। আমার চলার মতো কোন সামর্থ্য ছিল না। এই বাগান করার পরে ইনশাআল্লাহ আমার দিন ঘুরে গেছে। অভাব নেই। সুন্দরভাবে চলছি। একটা দিয়ে শুরু করলেও এখন আমার বাগানের সংখ্যা দুটি। ভবিষ্যতে আরও বাড়াব। এ মৌসুমে তিনি অন্তত ৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করব।
রোমানের সফলতা থেকে রুবেল মিয়া ও টিপু মিয়াসহ আরও কয়েকজন যুবক উদ্বুদ্ধ হয়েছেন আম বাগানে। তারাও গড়ে তুলেছেন বড় বড় বাগান। হাড়ি ভাঙ্গা ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিখ্যাত নানা প্রজাতির আম গাছও রোপণ করা হয়েছে বাগানগুলোতে।
এসব বাগান দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন বহু মানুষ। স্বাদে গন্ধে অতুলীয় হাঁড়িভাঙা আমের স্থানীয়ভাবে চাহিদা অনেক। তাই বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে বাজারে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। আম বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যায়।
একটি বাগানের মালিক রুবেল মিয়া বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম ৭৫ খেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। অনলাইনে অর্ডার দিলে দামটা একটু বেশি পড়ে।’
আম বাগান দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা লিটন আহমেদ বলেন, ‘হাঁড়িভাঙা আমের বাগান দেখে মনটা ভরে গেল। এই আমগুলো আমরা রাজশাহী, রংপুর থেকে এনে খেতে হতো আমাদের। এখন আর আমাদের সেখান থেকে আম আনতে হবে না। এলাকার চাহিদা মেটানের জন্য যথেষ্ট আম বাগানগুলোতে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোমানের বাগান দেখে এলাকায় অন্তত্ব ১০ টি নতুন বাগান হয়েছে। দু-চার বছর পর হয়তো এখানকার আমই অন্য জেলায় যাবে।’
হাটিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মনির হোসেন বলেন, ‘মানিকগঞ্জের দক্ষিণের এলাকায় একাধিক যুবক হাঁড়িভাঙা আমের বাগান গড়ে তুলেছে। এর ফলে তারা স্বাবলম্বী হয়েছে। আঁশবিহীন সুস্বাদু এই আমের এলাকায় বেশ চাহিদা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম মানিকগঞ্জে চাষ হলেও স্বাদে গন্ধে একই রয়েছে। বাগান সম্প্রসারণ ও বাজার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধান করা হবে।’
নদী বন্দর / জিকে