সিরাজগঞ্জের চলনবিলের বাতাসে ভাসছে শুটকি মাছের গন্ধ। চলনবিল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুটকি তৈরির ধুম পড়েছে।
এ অঞ্চলের শতাধিক শুটকি চাতালে দেশি প্রজাতির মাছের শুটকি তৈরিতে সকাল থেকে রাত অবধি মাছ কেনা, ধোয়া, চাতালে শুকানো এবং মান ও প্রকারভেদে বাছাই করে পৃথক করার কাজ করছেন শত শত নারী-পুরুষ।
মৎস্যভান্ডার খ্যাত চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বিভিন্ন স্থানে শুটকি উৎপাদনে চাতাল তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
চলনবিল এলাকায় ৪৮টি বিল, ১৪টি খাল ও ১১টি নদীতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে কৈ, মাগুর, বাঁচা, রুই, কাতলা, মৃগেল, বাউশ, আইড়, রিটা ইত্যাদি মাছ পাওয়া যেত। বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার উপকরণের সাহায্যে মাছ ধরতেন জেলেরা। তখন অভাব কী জিনিস বুঝতেন না তারা। বর্ষাকালে মাছ ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দিতেন। দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হতো শুটকি মাছ।
শুটকি ব্যবসায়ী আব্দুস মতিন ও সালাম জানান, এ ব্যবসায় অনেক লাভ। দেশব্যাপী চলনবিলের মাছের শুটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বিল এলাকায় এ বছর প্রচুর পরিমাণে টেংরা, পুঁটি, বাতাসী, চেলা, মলা, ঢেলা, টাকি, চিংড়ি, বোয়াল, চিতল, শিলং, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এখন মাছের দামও অনেক কম থাকায় সবাই শুটকি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন চাতালে শুটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শত শত শ্রমিক। প্রতিটি চাতালে নারী-পুরুষ মিলে ১২-১৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তবে এ কাজে নারী শ্রমিকরাই বেশি দক্ষ বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চাতালগুলোতে নারী শ্রমিকই বেশি।
শুটকি ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান মহিষলুটি মাছের আড়তে কাঁচা পুটি মাছ ৪০ থেকে ৮০ টাকা, চাঁদা ২০ থেকে ২৫ টাকা, খলিশা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও বেলে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৪০ কেজি কাঁচা মাছ শুকালে ১৩ কেজি শুটকি মাছ হয়। শুটকি মাছের মোকাম সৈয়দপুর, নীলফামারী, রংপুরে বর্তমানে পুটি ১৩০-২শ টাকা, চাঁদা ৮০-৯০ টাকা, বেলে ৩শ টাকা এবং খলিশা ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এসব শুটকি প্রকারভেদে প্রতি মণ ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়। মাছগুলো চাতালে নেয়ার পর বাজারজাত করতে মাস খানেক সময় লাগে।
উল্লাপাড়ার বড়পাঙ্গাসী ও মোহনপুর এলাকার জেলে আইয়ুব আলী, শাহজাহান শেখ, আবু কালাম জানান, শুকনো মৌসুমে তারা ক্ষেতে-খামারে কাজ করেন। বর্ষা মৌসুমে কাজ না থাকায় রাত-দিন খরা জাল দিয়ে চলনবিলে মাছ শিকার করেন। অনেকে মাছ শিকারের পর আড়তে বিক্রি করেন। সেই মাছগুলো যায় শুটকির চাতালে।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহেদ আলী জানান, গত বছর এ এলাকায় ৯৫ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর পোনা নিধন অভিযান জোরদার এবং বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় মাছের প্রাচুর্য বেড়েছে। যে কারণে চলনবিল এলাকায় এবার মাছের উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে। এ বছর শুটকি উৎপাদন আরও বাড়বে। মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেয়া হয়েছে।
নদী বন্দর / পিকে