বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই শিল্প মালিকরা জমি কিনছেন এবং শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি শিল্প স্থাপনের জন্য জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নেয়ার বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ মোংলার নেতা মনীন্দ্রনাথ রায় এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জমি কিনতে ডিসি অফিসের অনুমতি লাগে। কিন্তু শিল্প মালিকরা মোংলা এলাকায় প্রথমে জমি কিনে পরে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনুমতি নিচ্ছে, যা বিধিবহির্ভূত। এছাড়া পরিবেশের ছাড়পত্র না নিয়েই অনেক প্রতিষ্ঠান শিল্প অবকাঠামো গড়ে তুলছে; যা প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।’
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে মোংলা উপজেলায় শিল্প স্থাপনের জন্য মোট ১,৩৬৪.১৪৬৬ একর জমি বেচাকেনা হয়েছে। এর বাইরে অনেকে আবার ব্যক্তি নামে জমি কিনে পরবর্তীতে শিল্পকারখানা স্থাপন করছেন। তবে এ হিসাবের বাইরে আছে মোংলা বন্দর শিল্প এলাকা, ইপিজেড ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
মোংলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী জানান, চিলা-জয়মনি মৌজায় শিল্প মালিকরা জমি কিনলেও ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল আওতাধীন হওয়ায় সরকার তাদের শিল্প স্থাপনে অনুমতি প্রদান করছে না।
বাগেরহাটের পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ৪৩৪.৮২৪২ একর জমিতে ৮টি শিল্পকারখানার পক্ষ থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ৯২৯.৩২২৪ একর জমি ২১টি শিল্পকারখানার পক্ষ থেকে ক্রয় করা হয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিল্পকারখানার স্থাপনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান থাকলেও তারা এখনো পরিবেশের ছাড়পত্র নেয়নি।
যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র এখনো নেয়নি তারা হলো-বিদ্যারবাওন দিগরাজ মৌজার আমিন মোহাম্মদ এনার্জি লিমিটেড, মেসার্স বার্ডস বাংলাদেশ এজেন্সি লিমিটেড, ফমকম ফুড্স লিমিটেড, ডিবিএল ড্রেজিং লিমিটেড, রিমু ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, আচল এগ্রোপ্রসেসিং লিমিটেড, ওরিয়ন পাওয়ার খুলনা লিমিটেড ও ডেকান এলপিজি লিমিটেড।
চিলা-জয়মনি মৌজায় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান জমি কিনলেও এখনো যারা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেয়নি তারা হলো-এনার্জি প্যাক পা্ওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, কনফিডেন্স লিমিটেড, সাইফ বিল্ডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, সানমেরিন শিপইয়ার্ড, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড, ইবিএস এনার্জি প্যাক, নিক্সন গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, ফমকম গ্রুপ, কার্বন গ্রুপ, জাকিয়া তাজিন ও ইনটেক্স গ্রুপ।
পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র কেন নেয়া হয়নি— এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিএল ড্রেজিং লিমিটেডের স্থানীয় কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের জমি কেনার অনুমতি নেয়া আছে। জমিতে এলপিজি গ্যাস কোম্পানি করা হবে। জানুয়ারিতে পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে আবেদন করা হবে।’
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য জমি ক্রয় এবং ছাড়পত্র না নেয়া প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদফতরের বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন বাদল বলেন, ‘সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে আমরা ছাড়পত্র দিচ্ছি না। আর পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে কোথাও কেউ যদি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে, তাহলে তাদেরকে নোটিশ দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে।’
নদী বন্দর / পিকে