সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম কোম্পানীগঞ্জের ধলাই ব্রিজের নিচ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। শত শত লিস্টার মেশিন দিয়ে সেতু এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হলেও রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসন নীরব রয়েছে। এর ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিনে ধলাই সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শতাধিক লিস্টার মেশিন দিয়ে সেতুর পিলারের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করে নৌকা ও বলগেড বোঝাই করা হচ্ছে। কিন্তু ইজারা নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কেউ যন্ত্রচালিত মেশিন দিয়ে ইজারাকৃত এলাকা থেকে বালু তুলতে পারবে না। সনাতনী পদ্ধতিতে বেলচা ও বালতি দিয়ে বালু উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু উপজেলার কালাসাদক ও তৈমুর নগর মৌজা এলাকার বালু মহালের ইজারাসহ কোম্পানীগঞ্জের সর্বত্র লিস্টার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জে বালু মহাল থেকে রয়্যালিটি আদায় নিয়ে এবারও বিরোধ দেখা দিয়েছে। গত বছর রয়্যালিটির নামে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এবারও শুরু হয়েছে একই অবস্থা। তবে এবার নদীতে নয়, তীরে রাখা গতবারের বালু থেকে অবৈধভাবে রয়্যালিটি আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ইতোমধ্যে দুটি পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন। ইজারাদার পক্ষের মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। অপর পক্ষের আলী আব্বাছের অভিযোগটি রহস্যজনক কারণে এখনো মামলা হিসেবে নেয়নি পুলিশ।
জানা গেছে, ধলাই নদীর কালাসাদক ও তৈমুর নগর মৌজা এলাকার বালু মহালের ইজারা পান মেসার্স তুহিন কন্সট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার দেব। তারা রয়্যালিটি আদায়ও শুরু করেন। এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে ইজারা বহির্ভূত জায়গায় টোল বসিয়ে মজুদ করা বালু বহনকারী ট্রাক থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ঝামেলা সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে স্থানীয় তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও বিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আব্বাস আলী বাদী হয়ে আলফু চেয়ারম্যানসহ আটজনের বিরুদ্ধে হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন।
এর আগে একই ঘটনায় আলী আব্বাছ নামের এক বালু ব্যবসায়ী তার বালু বহনকারী ট্রাক থেকে এক হাজার টাকা করে রয়্যালিটির নামে অবৈধভাবে চাঁদা দাবি ও মারধরের অভিযোগে উপজেলার ভোলাগঞ্জ গ্রামের রইছ আলীর ছেলে আব্বাছ আলী, বর্ণি গ্রামের চেরাগ আলীর ছেলে করম আলী, একই গ্রামের মৃত মাহমদ আলীর ছেলে আজির উদ্দিনসহ অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তার মামলাটি এখনো নথিভুক্ত হয়নি।
এ বিষয়ে আলী আব্বাস জানান, গত বছর নিয়ম অনুযায়ী রয়্যালিটি প্রদান করে ধলাই সেতুর উত্তর পার্শ্বে বিক্রির জন্য বালু মজুদ করা হয়। সেখান থেকে ট্রাকযোগে বালু পরিবহন শুরু করলে ইজারাদার পক্ষের লোকজন রয়্যালিটির নামে চাঁদা দাবি ও মারধর করেন।
এদিকে আব্বাস আলী দাবি করেন, তারা ইজারাবহির্ভূত জায়গা থেকে রয়্যালিটি নিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে সোমবার (৭ জুন) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরশাদ মিয়া বলেন, ‘ব্রিজের ৫০০ মিটারের মধ্যে কেউ বালু উত্তোলন করতে পারবে না। এটা ইজারায় বলা আছে। ব্রিজের নিচ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে শুনে ট্রাস্কফোর্সের অভিযানে যাই। তবে আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ওরা সরে গেছে। আমি বিজিবি ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানে গিয়ে ওদের সেখানে পাইনি। তবে ইজারাদারকে কঠোরভাবে বলা হয়েছে কেউ যেন ব্রিজের পিলার এলাকা থেকে বালু উত্তোলন না করে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ধলাই ব্রিজের দক্ষিণ ও উত্তরে দুটি বালু মহাল রয়েছে। তবে এবার ইজারা দেয়া হয়েছে ধলাই ব্রিজের দক্ষিণ দিক। উত্তর দিকটা ইজারা দেয়া হয়নি। উত্তর দিকে গত বছরের ইজারাদারের বালু উত্তোলন করে মজুদ রাখা বালু থেকে পুনরায় রয়্যালিটি আদায় করার অভিযোগ পেয়ে আমরা বলে এসেছি এখন আর যেন মজুদ করা বালু থেকে রয়্যালিটি আদায় করা না হয়।’
তিনি আর বলেন, ‘এরপর ইজারাকৃত বালুমহালের বাইরের অংশে মজুদ করা বালু থেকেও রয়্যালিটি আদায় করার অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। তখন ইজারাদার পক্ষের লোকজন তা অস্বীকার করে। বর্তমানে উত্তর দিকের সঙ্গে যেন দক্ষিণ দিকের উজরাদারের কোনো সমস্যা না হয় এজন্য আমরা রয়্যালিটি আদায়ের স্থান পরিবর্তন করে দিয়েছি।’
কোম্পানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ইজারাদারের পক্ষে একটি মামলা হয়েছে। অপর পক্ষের অভিযোগটির তদন্ত চলছে। বিস্তারিত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) স্যার ভালো বলতে পারবেন। এ ছাড়া ধলাই সেতু এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’
নদী বন্দর / এমকে