টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সবজির রাজধানী খ্যাত সাগরদিঘী বাজারের চৌরাস্তায় সিসি ঢালাইয়ের কাজ না করায় চারটি পৃথক সড়কে চলাচলে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন চলাচল করতে না পারায় পাহাড়ি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার মৌসুমি ফল ও সবজি কৃষকের ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী বাজারের চৌরাস্তা থেকে পশ্চিমে ঘাটাইল বাসস্ট্যান্ড, উত্তরে মধুপুর বাসস্ট্যান্ড, দক্ষিণে সখীপুর বাসস্ট্যান্ড ও পূর্বদিকে ময়মনসিংহের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পাকা সড়ক রয়েছে। পাকা সড়কগুলোর সংযোগস্থল সাগরদিঘী চৌরাস্তা মোড়ে ২৫০ মিটার বর্গাকার এলাকায় পাহাড়ি ঢল ও ভারী যানবাহন চলাচল করায় সড়কের বিটুমিন ও ইটের খোয়ার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হওয়ায় পায়ে হেঁটে চলারও অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া কোনো কোনো সময় বৃষ্টির পানি জমে গর্তগুলো ভরাট হয়ে এক প্রকার দুর্ঘটনার ফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়ক।
বৃষ্টির পর ওই এলাকা দিয়ে ট্রাক ও লরিসহ ভারী যানবাহন সড়কের পাকা অংশ পর্যন্ত এসে পানি সরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এতে প্রায়ই গাড়ির দীর্ঘ লাইনে লেগে যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়কের গর্ত সম্পর্কে না জানা চালকরা যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘাটাইল-সাগরদিঘী সড়কে কামালপুর থেকে সাগরদিঘী হয়ে গুপ্তবৃন্দাবন পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কে উন্নয়ন কাজ চলছে। কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নিয়াজ ট্রেডার্স। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু করে ইতোমধ্যে সড়কে উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ করেছে। সাগরদিঘী চৌরাস্তা মোড়ে ৬৬৮ মিটার সড়কে সিসি ঢালাইয়ের কাজের অনুমোদন না হওয়ায় তারা কাজ করতে পারছে না। এদিকে বৃষ্টিতে পানি জমে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানি সরে গিয়ে মাটি না শুকালে সিসি ঢালাইয়ের অনুমোদন পেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ঢালাইয়ের কাজ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে।
সাগরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার জানান, এ পাহাড়ি অঞ্চলটি সবজির রাজধানী নামে খ্যাত। এ অঞ্চলে কলা, পেঁপে, লেবু, বেগুন, কাঁচা মরিচ, ঢেঁড়স, লাউ, শসা, কুমড়া, পটল, বিভিন্ন ধরনের শাক, আনারস, কাঁঠাল, আম, জাম ইত্যাদি সবজি ও ফল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার সবজি ও ফল রাজধানী হয়ে বিদেশেও রফতানি হয়। যানবাহন চলাচল করতে না পারায় কৃষকের ফসল ক্ষেতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার গিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী গত মঙ্গলবার (৮ জুন) বিকেলে সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার জানান, সাগরদিঘীতে সামান্য কাজের জন্য ঘাটাইল, কালিহাতি, সখীপুর, মধুপুর, ময়মনসিংহের ভালুকা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ যান চলাচল ও যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়দের উৎপাদিত সবজি বিপণন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি তিনি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উত্থাপন করেছেন এবং সভা থেকে টাঙ্গাইলের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলিউল হোসেন জানান, সাগরদিঘী বাজারের চার রাস্তা মোড়ের কাজ দরপত্র মোতাবেক পিচ ঢালাই করলে টিকবে না। যেহেতু বাজার এলাকা, তাই কাজটি সিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে করতে হবে। কিন্তু দরপত্রে সিসি ঢালাই নেই। নতুন করে ৬৬৮ মিটার সড়কে সিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে কাজ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
নদী বন্দর / বিএফ