সবুজ সমারোহ মাঠটিতে তখনও খেলা করছিলেন একদল তরুণ। পাশেই বিভিন্ন বয়সের মানুষ খেলা উপভোগ করছেন। মাঠের দুই পাশে দুটি গোলবার দন্ডায়মান। এর পাশেই বন বিভাগের কর্মকর্তারা চারা রোপণের জন্য মাটি ভরাট করে যাচ্ছেন।
কয়েকদিনের মধ্যেই পুরো মাঠে চারা রোপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা। যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত খেলার মাঠটি বন বিভাগের একটি সিদ্ধান্তেই এমন হয়ে যাবে ভাবতেই পারছেন না এলাকাবাসী।
শনিবার (১২ জুন) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ১ নম্বর সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর গ্রামের মাঠটিতে এলাকার একঝাঁক তরুণকে ফুটবল খেলতে দেখা গেছে। এর পাশেই বন বিভাগের কর্মকর্তরা চারা রোপণ করার জন্য মাটি ভরাট করে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, গ্রামটিতে তেমন কোথাও খেলার মাঠ নেই। যুগ যুগ ধরে এটিই তাদের একমাত্র খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। হঠাৎ করেই বনায়নের নামে বন কর্মকর্তারা এটিতে চারা রোপণ শুরু করেছেন। এটি বন্ধ করতে তারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এলাকার বাসিন্দা রায়হান উদ্দিন বলেন, সামাজিক বনায়নের জন্য বন বিভাগের অনেক জায়গা আছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ছোট একটি খেলার মাঠে কেন তাদেরকে বনায়ন করতে হবে? আমরা শুধু খেলার মাঠটি উন্মুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বনবিভাগের সীতাকুণ্ড রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, শুরুতে মাঠটি উন্মুক্ত রেখে বনায়ন করা হয়েছিল। মূলত তিনটি কারণে মাঠটিতে চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথমত চারদিকে বন, মাঝখানে একটি মাঠ খোলা থাকায় বনের হরিণরা সেখানে খেলাধুলা করে।
তিনি বলেন, আর এই সুযোগে অসাধু চক্রের কিছু লোক মাঠ ফাঁদ বসিয়ে হরিণ শিকার করেন। কিছুদিন আগেও সেখান থেকে আমরা একটি হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, মাঠটিতে কিছু লোক গরু চরায়। বিভিন্ন সময় গরু পাশের বনের চারা নষ্ট করে ফেলে। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, এটি একটি উপকূলীয় এলাকা। এই এলাকায় যত বেশি বনায়ন করা যায়, ততবেশি এলাকাবাসীর জন্য ভালো। মূলত এসব কারণে মাঠটিতে চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীকে অন্য জায়গায় খেলার মাঠের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গতকালও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেছে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এখানে আমরা আজকে আছি কালকে থাকব না। ওই মাঠে চারা রোপণ করে আমাদের কোনো লাভ নেই। আমরা মূলত তাদের সুবিধার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমি এলাকাবাসী কিংবা বনবিভাগ কারও কাছ থেকে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই বিষয়টি আমরা দেখব। তবে যদি খেলার মাঠে বনায়ন করা হয়ে থাকে তবে বিষয়টি দুঃখজনক। কারণ এলাকার তরুণরা খেলাধুলা করতে না পারলে মাদকের দিকেই ঝুঁকবে।
নদী বন্দর / সিএফ