একসময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা মোবাইল হ্যান্ডসেট নোকিয়া এখন বাংলাদেশেই উৎপাদন ও এসেম্বল হতে যাচ্ছে। দেশে উৎপাদিত এসব ফোনে থাকছে বিশ্বমানের প্রযুক্তি। দেশে এই মোবাইল সেট তৈরি হওয়ায় কর্মসংস্থান এবং বিদেশি বিনিয়োগ উভয়ই বেড়েছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজলার বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির ৫ নম্বর ব্লকে ৫ একর জমি বরাদ্দ নিয়ে কারখানা স্থাপন করেছে নোকিয়া মোবাইল। ২০১৭ সালের ২৪ মে জমি বরাদ্দ নিয়ে অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করে কোম্পানিটি। ভাইব্র্যান্ট সফটওয়্যার (বিডি) লিমিটেড এই বরাদ্দ নেয়। এর ভবনটি ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি) নকশায় নির্মাণাধীন। বরাদ্দ নেয়ার সময় সেখানে ৩৮২ কোটি টাকা বিনিয়োগের উল্লেখ করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভাইব্র্যান্ট সফটওয়্যার এবং বাংলাদেশের ইউনিয়ন গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে সেখানেই উৎপাদন হবে নোকিয়া ফোন।
জানা গেছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত দুটি মডেলের স্মার্টফোন দিয়ে বাংলাদেশে ফের নতুন করে পথচলা শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। গাজীপুরের কারখানায় সংযোজন করা হবে ‘নোকিয়া ৪.২’ এবং ‘জি১০’ এই দুটি মডেলের স্মার্টফোন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুলাইয়ের শেষদিকে ফোন দুটি বাজারে আসবে।
নোকিয়ার হেড অব বিজনেজ ফারহান রশীদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘চলতি জুন মাসের শেষ দিকেই মোবাইলের যন্ত্রাংশ তৈরির কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন তো ঢাকার আশপাশ জেলাগুলোতে লকডাউন চলছে। কানেক্টটিভিটি মোটামুটি আটকে গেছে। আমরা আগে আশা করেছিলাম হয়তো এই সপ্তাহ থেকে শুরু করতে পারব। কিন্তু এখন তো ঢাকা থেকে লোক ঢুকতেও দিচ্ছে না, বের হতেও দিচ্ছে না। তাই আমরা আশা করছি সামনে সপ্তাহের কোনো এক সময় শুরু করতে পারব।’
ফারহান রশীদ আরও বলেন, ‘নোকিয়ার এই ফ্যাক্টরিতে সরাসরি কাজ করবেন ৫০০ লোক। আর বিক্রি বাড়লে আরও ইনডাইরেক্টলি ৫০০ লোকের মতো যোগ হবে। সব মিলে প্রায় হাজারখানেক লোকের কর্মসংস্থান হবে এখানে।’
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ মোবাইল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমরা ৬২ ভাগের ওপরে ডমেস্টিক (স্থানীয়) চাহিদা মেটাচ্ছি। স্মার্টফোনের প্রায় ৮৫ ভাগ বাংলাদেশ উৎপাদন করছে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে আমরা রফতানিও করছি। সুতরাং সেই মাইলফলক ইতোমধ্যেই তৈরি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্যামসাং এবং নোকিয়ার মতো কোম্পানি বাংলাদেশ মোবাইল সেট উৎপাদন করবে এটি বোধহয় অনেকে কল্পনাও করতে পারেনি। অথচ সেই ঘটনাটা ঘটেছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই সুযোগটা ২০১৭ সালে আমি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে নিতে পেরেছিলাম। দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরিকে আরও উৎসাহিত করতে যন্ত্রাংশ উৎপাদনে প্রযোজ্য ভ্যাট অব্যাহতি নিতে পেরেছিলাম সেই বছরে। একই সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে কাঁচামালের আমদানি শুল্কে ছাড়েও ব্যবস্থা করেছিলাম। আমি এখনও কৃতজ্ঞ আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে, তিনি অসম্ভব দূরদর্শিতার মানুষ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে গিয়েছিলেন। ফলে আজকের বাংলাদেশ অনন্ত মোবাইল শিল্পের ক্ষেত্রে এই স্বপ্নটা দেখতে পারে যে আমরা এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ হব। নতুন নতুন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। নতুন ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ড বাংলাদেশ উৎপাদনের চেষ্টা করছে। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই একটা বড় ঘটনা।’
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেটের মোট উৎপাদন ও আমদানি ছিল ২৯ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ইউনিট। এর মধ্যে ১৬ দশমিক ২১ মিলিয়ন ইউনিট স্থানীয়ভাবে ১০টি সংস্থা তৈরি করেছিল এবং ১৩ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ইউনিট আমদানি করা হয়েছিল।’
নদী বন্দর / সিএফ