ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কুমার নদীর ওপর প্রায় ৪২ বছরের পুরোনো মুজুরদিয়া-কমলেশ্বরদী ব্রিজ এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও চলতে ভয় পাচ্ছে মানুষ। যেকোনো সময় ব্রিজটি ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরপরও জীবনের তাগিদে প্রতিনিয়ত পারাপার হতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, একপাড়ে সাতৈর ইউনিয়নের মুজুরদিয়া বাজার, আরেকপাড়ে দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী বাজার আর মাঝে প্রবাহমান কুমার নদী। প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিদিন এপার থেকে ওপার যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এটি। এই দুই পাড়ের দুটি ইউনিয়ন ছাড়াও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মেল বন্ধন এ সেতুটি। পাশাপাশি জেলা সদর ও কয়েকটি উপজেলায় যাতায়াতের একমাত্র ব্যবস্থাও এটি।
স্থানীয় বাসিন্দা সমাজ সেবক রাকিব হোসেন জীবন ও ফোরকান মোল্লা জানান, ব্রিজের এক প্রান্তে অবস্থিত কমলেশ্বরদী এয়াকুব আলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আরেক প্রান্তে কাদিরদি ডিগ্রি কলেজ। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও সাধারণ মানুষদেরও নিত্য যাতায়াত এই ব্রিজের ওপর দিয়েই। পণ্য পরিবহনসহ প্রতিদিন দুপ্রান্তের হাজারও লোকের চলাচলের ভার বহন করে সেতুটি।
খোঁজ জানা গেছে, ১৯৮২-১৯৮৩ সালে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য আট ফুট চওড়া ও প্রায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ সেতু নির্মিত হয়। নির্মাণ সময়ের বয়স আর ভারী যানবাহন চলাচলে বিগত কয়েক বছর ধরেই সেতুটির এমন বেহাল দশা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। বর্তমানে সেতুর একটি স্প্যান ডেবে যাওয়াসহ সামান্য ভার প্রয়োগেই বিপদজনকভাবে কেঁপে উঠছে। দুপাশের রেলিং ভাঙা ও সেতুর মাঝখানে ফাটল ধরাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত।
মুজুরদিয়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য, রুহুল আমিন, ব্যবসায়ী এনামুল হক, কাদিরদি এলাকার নিশিকান্ত দাস, স্বপন দত্ত জানান, ব্রিজটির অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। তবুও থেমে নেই মানুষের পারাপার। এমন অবস্থায় যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা। একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যেতে পারে দুপাড়ের মানুষের সহজ মিতালী।
দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন মুশা বলেন, ‘এই সেতুটি দিয়ে আমার দাদপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের ১০-১৫ হাজার মানুষের যাতায়াত। ব্রিজের বর্তমান অবস্থা খুবই বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ। সাইনবোর্ড লিখে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ব্রিজটি নতুন করে করার জন্য আরও কয়েক বছর (২০১৮-১৯ সাল) আগে এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান অনেক চেষ্টা করেছেন। তৎকালীন স্থানীয় প্রকৌশলী ফরিদপুর নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ঢাকা থেকেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরেজমিনে এনে একাধিকবার দেখিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ করে আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন মুজুরদিয়া পাশে অ্যাপ্রোচ রোডের কারণে সমস্যা দেখা দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারাও বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছেন। তবে ব্রিজটি ভেঙে গেলে আমার এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে। জেলা উপজেলা সদরে যেতে কমপক্ষে ৮-১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হবে।’
এ ব্যাপারে সাতৈর ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে আমি নিজে ব্রিজ নির্মাণের জন্য ওই সংযোগ (অ্যাপ্রোচ) সড়কের জায়গা মাপজোক করি। কিন্তু সেখানে রাস্তার একপাশে একটি মসজিদ এবং অপরপাশে কিছু দোকানপাট রয়েছে। সেগুলো অপসারণ করতে না পারায় ব্রিজের কাজ শুরু করা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জানামতে এসব স্থাপনা সরকারি খাস জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে এসব স্থাপনা অপসারণ করা দুষ্কর। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের হস্তক্ষেপে এসব স্থাপনা অপসারণ করা গেলে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।’
এ প্রসঙ্গে বোয়ালমারী উপজেলা প্রকৌশলী (স্থানীয় সরকার বিভাগ) এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিজটি ১৯৮২-৮৩ সালে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য তৎকালীন প্রকল্প হিসেবে নির্মিত। আমরা সরেজমিনে ব্রিজটি পরিদর্শন করে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে এর সমাধান করার। তবে ব্রিজ পুরোনো হওয়ায় সংস্কারে অবস্থা নেই। নতুন ব্রিজ করতে হবে। এছাড়া নদীর ওপর বড় ব্রিজ করতে বিআইডব্লিউটিএর অনুমতি নেয়াসহ অনেক কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। তবে দুই পাশে বিশেষ করে মুজুরদিয়া পাশের অ্যাপ্রোচ রোডের কারণে ব্রিজ নির্মাণ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
নদী বন্দর / পিকে