চীন, জাপান, ভারত, দুবাই, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে চুলের ক্যাপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে চুলের ক্যাপের বাজার। লাভজনক হওয়ায় বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ঝুঁকছেন পরচুলা তৈরির দিকে।
এরই ধারাবাহিকতায় দিনাজপুরে প্রায় ২১টি পরচুলা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। মান সম্পন্ন কাজ, উৎপাদন খরচ কম এবং কম মূল্যে আমদানি করতে পারায় চীন ও জাপানসহ ১০টি দেশের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে চুলের ক্যাপ আমদানি করছে। এসব কারখানায় ২ হাজার নারী শ্রমিক কাজ করছেন।
উদ্যোক্তারা বলছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে দিনাজপুরের এই কারখানাগুলোতে অন্তত ১০ হাজার নারীর কর্ম সংস্থান হবে। এছাড়া জেলায় গড়ে উঠতে পারে পরচুলার তৈরির নতুন কারখানা।
নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর, বিরামপুর উপজেলা নিয়ে দিনাজপুর-৬ আসন । এই আসনের চারটি উপজেলায় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের সহায়তায় গড়ে উঠেছে ১৫টি পরচুলা তৈরির কারখানা। কারখানাগুলোতে কাজ করছে ১ হাজার ৮০০ নারী শ্রমিক। যারা সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। কাজ পেয়েছেন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীসহ প্রতিবন্ধীরাও।
এছাড়া সদর উপজেলার রানীগঞ্জ, কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের সুন্দইল ও বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ীতে, খানসামার প্লান বাজার ও মন্ডলের বাজারে দুটি পরচুলা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে।
সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের সহায়তায় গড়ে ওঠা ১৫টি পরচুলা তৈরির কারখানার সমন্বয়কারী মো. জামান বলেন, ‘ঢাকা উত্তরায় একটি পরচুলা কারখানা থেকে এই ধারণা পাই। চুল দিয়ে ক্যাপ বানাতে হবে এই ধারণা এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ছিল না। এই অঞ্চলের নারীদের কীভাবে কর্মমুখী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পরচুলা নিয়ে আলোচনা হয়। এগিয়ে আসেন সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। তার নির্বাচনী এলাকায় গড়ে তুলেন পরচুলা তৈরির কারখানা।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে আমরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিই। কাজ শিখতে একজন নারীর সর্বোচ্চ পাঁচ-সাতদিন সময় লাগে। এরপর কাজ শুরু করেন। তারা সংসার সামলানোর পাশাপাশি আমাদের কারখানাগুলোতে কাজ করে ৮-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। বর্তমানে ২ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। পরিকল্পনা রয়েছে আগামী এক বছরের মধ্যে ১০ হাজার নারী কর্মী তৈরি করার।’
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় মেসার্স সায়মা হেয়ার এন্টারপ্রাইজ ইউটেক কারখানার ম্যানেজার অমর ফারুক বলেন, ‘পরচুলা তৈরিতে কাজ করছে নারী শ্রমিকরা। এখানে গৃহিণী, শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীরাও কাজ করছে। এটা নতুন কারখানা এখানে কর্মীর সংখ্যা ৮৫ জন।’
দিনাজপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মোর্শের আলী খান বলেন, ‘চীনারা আমাদের এই অঞ্চল থেকে ব্যাপক পরচুলা ক্রয় করছে। এটি একটি সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত হয়েছে। বেসরকারিভাবে উদ্যোক্তারা পরচুলা তৈরিতে বিচ্ছিন্নভাবে ভূমিকা রাখছে। পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত নারীরা এখানে কাজ করছে। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো দিক। তারা স্বাবলম্বী হচ্ছে। কিন্তু এটাকে সরকারি নজরদারিতে এনে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার দরকার।’
নদী বন্দর / সিএফ