দেশের মধ্যে ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা অববাহিকার লালমনিরহাট নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও নাটোর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গঙ্গা নদীর অববাহিকার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কতিপয় স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, জুন মাসে বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকার অনেক স্থানে বৃষ্টিপাতসহ কতিপয় স্থানে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে। এর ফলে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়ার সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি সপ্তাহে উজানের অববাহিকার অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি সামগ্রিকভাবে বাড়তে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর জন্য আগামী সাত দিনের অববাহিকাভিত্তিক ধারণাগত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
ব্ৰহ্মপুত্র অববাহিকা
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বর্তমানে স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ ও উজানে অববাহিকায় ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের উপর আগামী ২৪ ঘণ্টায় মৌসুমি বায়ু সক্রিয়তা লাভ করতে পারে, যার ফলে চলতি সপ্তাহে অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আগামী সাত দিনে সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে মাঝামাঝি সময়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এই সময়ে অববাহিকাভুক্ত কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও নাটোর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। একই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা এবং ধরলা নদীর পানি বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে তিস্তা নদীর পানি কতিপয় স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং অববাহিকাভুক্ত লালমনিরহাট, নীলফামারী এবং রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
গঙ্গা অববাহিকা
গঙ্গা নদীর পানি বর্তমানে কমছে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমায় অবস্থান করছে। চলতি সপ্তাহে দেশের উজানে ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে গঙ্গা নদীর পানি আগামী সাত দিনে পুনরায় বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর সমতল বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা নদীর পানিও চলতি সপ্তাহে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কতিপয় স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এই সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলের রাজবাড়ি, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গঙ্গা নদীর অববাহিকার জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মেঘনা অববাহিকা
মেঘনা অববাহিকার উজানের প্রধান নদীগুলোর পানি বর্তমানে সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী সাত দিনে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার উজানের অন্যান্য নদ-নদীর (সারিগোয়াইন, যদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস, মনু, খোয়াই) পানি সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কিছু স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকা
সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী সাত দিনে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকা অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হতে পারে, এর ফলে এই অববাহিকাভুক্ত নদ-নদীর পানি আগামী সাত দিনে সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। চলতি সপ্তাহে এই অঞ্চলের বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় ভারি বর্ষণের কারণে কতিপয় স্থান ভূমিধ্বসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
উপকূলীয় অঞ্চল
আগামী সাত দিনে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে কোনো ঘূর্ণিঝড়/জলোচ্ছ্বাস পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
নদী বন্দর / এমকে