দেশে মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে মৃত্যুর রেকর্ড বেড়েই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সারাদেশে চলমান সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন আরও ১ সপ্তাহ বাড়িয়েছে সরকার। আজ সোমবার (৫ জুলাই) দুপুরে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্তে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বের সকল বিধি-নিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় সূত্রস্থ স্মারকের নির্দেশনার অনুবৃত্তিক্রমে ০৭ জুলাই ২০২১ তারিখ মধ্যরাত হতে ১৪ জুলাই ২০২১ তারিখ রাত ১২:০০ ঘটিকা পর্যন্ত এ বিধি-নিষেধ আরোপের সময়সীমা বর্ধিত করা হলো।’
এর আগে গতকাল রোববার (০৪ জুলাই) কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আরটিভি নিউজকে বলেছিলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে প্রথম থেকেই আমাদের বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ ছিল যে, দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন দেওয়া যায় কিনা? কিন্তু সরকার কোনো এক টেকনিক্যাল কারণে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন দিয়েছে। আমরা এখনও মনে করছি, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আরও এক সপ্তাহ কঠোর লকডাউন বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।’
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ দিয়ে আসছে। দেশব্যাপী লকডাউনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করে। এরপরও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না আসায় সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গত ২৮ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে। তবে প্রয়োজন মনে করলে আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে।
চলতি বছরের গত ৩০ জুন সারাদেশে ১ সপ্তাহের জন্য জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যা এখনও চলমান রয়েছে, শেষ হবে ০৭ জুলাই রাত ১২ টায়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, যানবাহন ও দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো- ১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। ২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে। ৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ৪. সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। ৫. জনসমাবেশ হয় এই ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
লকডাউন বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ের কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
এতে আরও বলা হয়, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনা-বিজিবি-পুলিশ-র্যাব ও আনসার নিয়োগ এবং টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এই বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
চলমান বিধিনিষেধে শিল্পকারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা, স্বাস্থ্যসেবা, করোনার টিকাদান, রাজস্ব আদায় কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসহ অন্যান্য জরুরি বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো ভেসেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রয়েছে। বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ, স্থল) ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাবেচা করতে দেওয়া হচ্ছে।
নদী বন্দর / পিকে