রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে এবার হানা দিয়েছে ম্যালেরিয়া। দেশের সবচে বড় এই ইউনিয়নটি দুর্গম ও সীমান্তবর্তী হওয়ায় সরকারের সব চিকিৎসা এই অঞ্চলে সঠিকভাবে পৌঁছায় না। সচেতনতার অভাবেও এই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের চিকিৎসার প্রতি নেই তেমন একটা আগ্রহ।
এর আগে, ডায়রিয়া ও হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে এই ইউনিয়নের অনেকেই মারা যান। এবার দীর্ঘসময় পর ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এখানে। বিশেষ করে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়া, বড়ইতলী পাড়া, শিব পাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মন্দির ছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই, বেটলিং এই সব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে সাজেককে ম্যালেরিয়ার রেডজোন ঘোষণা করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের তথ্যমতে, ব্র্যাকের পরিচালনায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সাজেক ইউনিয়নের ১০ হাজার ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষায় ৬৭ জনের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। শুধু জুনেই ৪৯ জনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে। আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরীক্ষায় ২৯ জনের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু শনাক্ত হয়।
বাঘাইছড়ির উপজেলার সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানান, পাহাড়ি জেলায় একসময় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় সেটা কমে এসেছে। তবে এবছর সাজেকে হঠাৎ করেই আবারও ম্যালেরিয়া রোগী বেড়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, সরকারি, বেসরকারি হিসেবে রোগীর যে সংখ্যা দেখানো হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীরা রক্ত পরীক্ষা করতে আসে না। জ্বরের লক্ষণ দেখে স্বজনরা বাজারে এসে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে যায় এবং তারা মশারি ব্যাবহার না করার কারণে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে।
সাজেকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হীরা নন্দ্র ত্রিপুরা জানান, এর আগে সাজেকে মহামারি আকারে ডায়রিয়া এবং হাম (পোলিও) দেখা দিয়েছিল। এবার ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সচেতনতার অভাবে এই এলাকায় প্রায়শই বিভিন্ন রোগে ইউনিয়নবাসী আক্রান্ত হচ্ছে।
রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, জেলায় ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া রোগে ১৭ হাজার ৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছিল, ২০১৮ সালে ২ হাজার ৯৯৩ জন, ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৩ জন, ২০২০ সালে ১ হাজার ৩৭৭ জন। জেলায় উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় বাঘাইছড়ি উপজেলায়। ২০১৪ সালে ৫ হাজার ২৫৬ জন, ২০১৮ সালে ৮২৪ জন, ২০১৯ সালে ১ হাজার ২৪ জন, ২০২০ সালে ৩৭২ জন। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৩২৬ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রয়েছেন যার মধ্যে জুন মাসে ২১৭ জন এর মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৭৮ জন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহমদ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুন মাসে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ৭৮জন। দুর্গম সাজেক ইউনিয়নকে এরইমধ্যে ম্যালেরিয়ার রেডজোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’
ম্যালেরিয়া রোগ বিস্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে ঐসব এলাকায় ব্র্যাকসহ আমরা একসঙ্গে কাজ করি। ব্র্যাক আমাদের যেটা জানিয়েছে তাদের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে মশারি বিতরণ করা হলেও স্থানীয়রা ব্যবহার করে না। ফলে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছর আমরা প্রায় ৮০ হাজার মশারি বিতরণ করেছি। যারা জুমে কাজ করে এবং মশারি ব্যবহার করছে না তাদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।’
নদী বন্দর / এমকে