করোনাভাইরাস মহামারির হানায় ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এ থেকে বাঁচতে ঘরের বাইরে সবসময় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাতে মানুষের উপকার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর হাত ধরে পরিবেশের সামনে হাজির হয়েছে নতুন বিপদ। এসব মাস্কের একটি বড় অংশই গিয়ে পড়ছে সাগরে। আর তাতে সামুদ্রিক পরিবেশ বিপণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবর ডয়েচে ভেলের।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, গত বছর প্রায় ১৫০ কোটি মাস্ক সাগরে গিয়ে পড়েছে। এসব মাস্কে থাকা বিভিন্ন উপাদান পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সাগরে বাস করা প্রাণীদের জন্যও সেগুলো বিপজ্জনক।
ওশান্স এশিয়ার অপারেশন্স ডিরেক্টর গ্যারি স্টোকস বলেন, এখন আমাদের মাস্কের সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে৷ সেগুলো সৈকতে ভেসে আসছে। এসব দেখে মনে প্রশ্ন জাগে: কেন এত মাস্ক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নষ্ট না হয়ে সাগরে এসে পড়ছে? এগুলো ধ্বংস করার সঠিক উপায় কী?
জার্মানির একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা ব্যার্নহার্ড শোড্রোভস্কি বলেন, উচ্চমানের হোক বা সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বা রাবারের গ্লাভস, সবই ময়লার পাত্রে ফেলার কথা। এগুলো রিসাইকেলের উপযোগী নয়। মেডিকেল বর্জ্য হওয়ায় সেগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সব মাস্ক পোড়ানো হচ্ছে না। এর একটা বিশাল অংশ সাগরে গিয়ে পড়ছে। এসব মাস্ক পানিতে বাস করা প্রাণীদের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা জানার চেষ্টা করে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
জার্মানির সিটিএল ল্যাবরেটরির এক বিশেষজ্ঞ বলেন, যদি গ্রামের কোনো খোলা জায়গায় মাস্ক ফেলা হয়, তাহলে শুরুতেই সেটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মাস্কের কিছু উপাদান, যেমন- পলিপ্রোপিলিন ডিকম্পোজ হতে অনেক সময় লাগে। এটিই আসল সমস্যা। এ কারণে মাস্ক সবসময় ঠিক জায়গায় ফেলা উচিত। যদি সবাই বনের যেখানে-সেখানে মাস্ক ফেলেন তাহলে সেটি দীর্ঘদিন সেখানেই থেকে যাবে। একপর্যায়ে তা মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হবে।
তাহলে এই বিপদ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? এ বিষয়ে গ্যারি স্টোকস বলেন, প্রথমেই আমাদের মাস্ক একবার ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার কীভাবে মাস্কের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করছে সেটি দেখতে হবে। মাস্ক রাস্তায় পড়লে সেগুলো ড্রেনে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ড্রেনগুলো সাগরে গিয়ে মিশেছে। সুতরাং ব্যক্তিগত পর্যায় ছাড়াও সরকারি স্তরে উদ্যোগ নিতে হবে।
নদী বন্দর / পিকে