আজ ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘অধিকার ও পছন্দই মূল কথা: প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার প্রাধান্য পেলে কাঙ্ক্ষিত জন্মহারে সমাধান মেলে।’
প্রতি বছর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করে আসছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের বাড়ায় চলতি বছর বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে তেমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি।
রোববার (১১জুলাই) পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর অনলাইনে এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূরের সভাপতিত্বে সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু এনডিসি প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করবেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ এক হাজার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ, গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৮ বছর, নারীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ৫ বছর, পুরুষের গড় আয়ু ৭১ দশমিক ২ বছর।
হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মোট প্রজনন হার ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, প্রতি হাজারে মাতৃমৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনসংখ্যার শিক্ষার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৭ বছর ও তদূর্ধ্ব জনসংখ্যার শিক্ষার হার ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৭ বছর ও তদূর্ধ্ব নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, প্রজনন স্বাস্থ্য প্রত্যেক নর-নারীর অধিকার। নিরাপদ মাতৃত্ব ও প্রসূতি সেবা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যা, নারীদের সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্তসহ নারীর যথাযথ মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা। পরিকল্পিত পরিবার একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। পরিবারের আকার ছোট হলে তা পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার পূরণের পাশাপাশি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘একটি (দেশের জনসংখ্যা ও উন্নয়ন অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। দেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হলে প্রতিটি সেক্টরে এর প্রভাব পড়বে। তাই একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে পরিকল্পিত জনসংখ্যা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার পূরণের পাশাপাশি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে পরিকল্পিত জনসংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
তিনি বলেন, আমরা জনসংখ্যা-বিষয়ক বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা, পরিকল্পিত পরিবার গঠন, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, স্বাভাবিক প্রসব সংক্রান্ত সকল সেবা, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা এবং আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহীতার হার বৃদ্ধিকে যথেষ্ট অগ্রাধিকার দিয়েছি। নিরাপদ মাতৃত্ব, কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য, নারী শিক্ষা ও নারী কর্মসংস্থানের জন্য নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠকর্মীরা প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে দম্পতি পরিদর্শনের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। ফলে শিশুও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে এবং এই সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা এমডিজি অ্যাওয়ার্ড-২০১০ অর্জন করেছি।
নদী বন্দর / জিকে