বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসে যেতে বার বার ব্যর্থ হয়ে নিজ উদ্যোগেই গড়ে তোলেন গরুর খামার। এখন একজন সফল উদ্যোক্তা এবং লাভজনক ডেইরি ফার্ম ও গরু খামারের মালিক নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের নজরুল ইসলাম মানিক।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) উপজেলা পরিষদ থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে চরহাজারী গ্রামে নজরুল ইসলাম মানিকের ডেইরি ফার্মে গিয়ে দেখা যায় দৃষ্টি নন্দন ৯৭টি মোটাতাজা গরু এবং ১৮টি দুধেল গাভী। একবিঘা জমিতে গড়ে উঠা এ খামার এখন গ্রামের অন্য বেকার যুবকদের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও প্রেরণার উৎস।
খামারের মালিক নজরুল ইসলাম মানিক জানান, তার এ সফলতার পেছনে অনেক কষ্টের ইতিহাসও রয়েছে। শুরুর দিকে অজ্ঞাত ভাইরাসে তার একসঙ্গে ১০টি গরু মারা গিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। নতুন উদ্যোমে পরিশ্রম করে আজ তিনি সফল এক খামারি।
শুরুর কথা বলতে গিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি পরিবারের বড় ছেলে। বাবা সংসার চালাতে গিয়ে কিছু জমি বিক্রি করে দেন। এরপর পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সংসারে তারই দায়িত্ব ছিল বেশি। হাতে সামান্য কিছু পুঁজি ছিল। তার সঙ্গে ধারদেনা করে যা টাকা পেলেন, তা দিয়ে বাজার থেকে দুটি উন্নতজাতের গাভী কেনেন নজরুল।
ভালোমতো যত্নের পর গাভী দুটি বেশ মোটাতাজা হয়। একসময় বাছুর হয়। গাভীগুলো দুধ দিতে থাকে। দিনে দিনে নজরুলের সময় বদলাতে থাকে। দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে শংকর জাতের গরু কেনেন এবং গরুর বংশবৃদ্ধিতে মনোযোগী হন। এখন গরুর খামার থেকে প্রতিদিন দুধ বিক্রি করেন ১০০ থেকে ১৪০ লিটার।
প্রতিকূলতার কথা বলতে গিয়ে নজরুল ইসলাম জানান, অনেক সময় প্রয়োজনীয় ডাক্তার পাওয়া যায় না। নিজে নিজে প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে বিভিন্ন সময় পরামর্শ শুনেছেন। বিভিন্ন সাময়িকী ও বই পড়ে গবাদি পশুর রোগ সম্পর্কে জেনেছেন। আস্তে আস্তে এখন তিনি বিভিন্ন রোগের কারণ ও তার প্রতিকার এবং প্রতিরোধের ব্যাপারে বেশ ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
খামার ঘুরে দেখা গেছে, নজরুলের খামারের পরিবেশ অনেক ভালো। ভেতর-বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন সব সময়। এ ছাড়া মশা-মাছি আর পোকামাকড় প্রতিরোধেরও ব্যবস্থা আছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অনেককে গরু কিনতে নজরুলের খামারে ভিড় করতেও দেখা গেছে।
গরুর খাবার নিয়ে নজরুল বললেন, ‘প্রতিদিন কাঁচা ঘাস, খড়, ভূসি, ভুট্টা, খৈল খাওয়াই। বড় একটি জমিতে উন্নতজাতের ঘাস নিজেই চাষ করি। বাজার থেকে খাবার বেশি কিছু কিনতে হয় না। এ জন্য গরুগুলোর স্বাস্থ্যঝুঁকি কম।’
আয়-ব্যয় সম্পর্কে তিনি জানান ,খামারে আটজন লোক কাজ করেন তারা। এরমধ্যে পাঁচজন বাইরের। তাদের প্রত্যেককে আট থেকে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়। প্রতি মাসে সাড়ে চার লাখ টাকার খাদ্য কিনতে হয়।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমি সরকারের কাছ থেকে কোনো সহায়তা চাই না। তবে সরকার যেন উন্নতমানের ভ্যাকসিন সরবরাহ করে সেটা চাই। নজরুলের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এলাকার অনেকেই এ কাজ করছেন এবং তাতে অনেকেই সফলতা পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে নজরুল ইসলাম এখনো অবিবাহিত। মাকে হারিয়েছেন কয়েক বছর আগে। তারপর ছোট দুইবোনকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ভাইকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। বাবা আর ভাই -বোন নিয়েই তার সংসার।
সফল খামারি নজরুল ইসলামের পরামর্শ, শিক্ষিত যুবকরা চাকরির জন্য ঘুরে ঘুরে হতাশ না হয়ে সঠিকভাবে গরুর খামারের ব্যবসায় নজর দিলে ভালো করতে পারবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আলমগীর মাহমুদ বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকলে জীবনে সফলতা আসে, নজরুল ইসলামই তার অনন্য উদাহরণ।’
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে সরকারিভাবে খামারিরা বিভিন্ন সমিতি করছে। এ সমিতি থেকে খামারিদের সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে এ ব্যবসায় অনেকেই মনোযোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
নদী বন্দর / বিএফ