পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত একটি গ্রামে বিরূপ পরিবেশে খাপ খাইয়ে আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন একদল কৃষক। নিজ উদ্যোগে তারা তৈরি করেছেন মিনি গ্রিন হাউজ, ব্যবহার করছেন মালচিং পেপারসহ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি।
শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজ করতে পানি সংরক্ষণের জন্য নিজেরাই তৈরি করছেন বিশেষ নালা। কৃষকদের এই উদ্যোগটি সারা দেশের কৃষকদের কাছে মডেল হতে পারে বলে মনে করেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানান সংকটের মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি কিংবা লবণাক্ততা কৃষকদের ক্ষতির মুখে ফেলছে। অনেকেই কৃষিতে বিনিয়োগ করে লোকসান হওয়ায় কৃষি কাজ ছেড়েছেন। তবে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নীলগজ্ঞ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামে এভাবেই চাষাবাদ হচ্ছে।
তারা স্থায়ীভাবে পলিথিন সেট তৈরি করে বর্ষা মৌসুমেও চাষ করছেন টমেটো মরিচ, ধনেপাতাসহ উচ্চমূল্যে ফসল। বাজারে কোন সময় কোন ফসলের ভালো দাম পাওয়া যায় সেই পরিকল্পনা মাথায় রেখে ফসল বাছাই করেন তারা। অবার অনেকেই মালচিং পেপার ব্যবহার করে উঁচু জমিতে বেগুন, লাউ, কুমড়া, করলাসহ লতা জাতীয় ফসল চাষ করে সফল হয়েছেন।
এ বছর মাচায় বারি তরমুজ-১ এবং বারি তরমুজ-২ আবাদ করা হয়েছে এ জেলায়। সারা বছর চাষ করা যায় এ কারণে এই তরমুজ নিয়েও এখানকার কৃষকদের বাড়তি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অসময়ে তরমুজ বাজারে তুললে ভালো দাম পাওয়া যায়।
কুমারমারা গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, অনেক আগে থেকেই তারা কৃষি কাজের সাথে জড়িত। তবে আগে ধান চাষে বেশি আগ্রহ থাকলেও এখন সবজি চাষকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ৩০ শতাংশ জমিতে ধান আবাদ করলে যে টাকা লাভ হয়, মাত্র এক শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করে এর চেয়ে বেশি লাভ করা সম্ভব।
একই এলাকার কৃষক কাশেম মৃধা বলেন, ‘মরিচ হচ্ছে কৃষকের মানি ব্যাগ, বিশেষ করে বোম্বাই মরিচ বাজারে তুললেই সাথে সাথে বিক্রি করা যায়। দামও পাওয়া যায় ভালো। এ ছাড়া সবজির মাচার পাশে লেবু চাষ করেও ভালো আয় হয়।’
পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যাতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইদ্রিস আলী হাওলাদার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন চাষাবাদের সময়ের ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে।
যে সময়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা সেই সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না অবার যে সময় বৃষ্টি না হওয়ার কথা সেই সময়ে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে কৃষকরে চাষাবাদের যে রুটিন তা ঠিক থাকছে না। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের টিকে থাকতে হলে আধুনিক চাষাবাদ ছাড়া উপায় নেই।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটের মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষকদের টিকে থাকা এবং খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় কিভাবে এই অঞ্চলের কৃষকদের চাষাবাদ উপযোগী লবণাক্ত ও খরা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে।’
বর্তমানে কলাপাড়ার নীলগজ্ঞ ইউনিয়নের উৎপাদিত ফসল থেকেই এই এলাকার বড় একটি অংশের চাহিদা পূরণ হচ্ছে বলেও জানান স্থানীয় কৃষকরা।
নদী বন্দর / বিএফ