করোনার কারণে দেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়া ভ্রমণ বন্ধ রয়েছে। ফলে পর্যটকদের আনাগোনা নেই। তাই ভোরের সূর্য উকি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাক-পাখালি আর জীববৈচিত্রের জাগরণে মুখরিত হয়ে উঠছে লাউয়াছড়ার চারপাশ।
দেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া। চিরসবুজ এ বনে ১৬৫ প্রজাতির উদ্ভিদের সমরাহ। পর্যাপ্ত খাদ্য আর নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে উঠায় এখানে যুগ যুগ ধরে বসবাস করছে বন্যপ্রাণি বানর, হরিণ, হনুমান ও উল্লুকসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র। এক সময় এদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতে প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াতো। ভোরের সূর্য উকি দিলেই বাসা ছেড়ে বেরিয়ে পড়তো খাদ্যের সন্ধানে। রেইন ফরেস্টখ্যাত চিরসবুজ এ বনে ছিল তাদের বিচরণ ভূমি।
গবেষকরা জানান ১৯৯৭ সালে ১৪ জুন মাগুরছড়া গ্যাস বিস্ফোরণ ও অপরিকল্পিত সামাজিক বনায়নের নামে গাছগাছালি নিধনে জাতীয় উদ্যানে গাছের ঘনত্ব কমে যাওয়া ও নানান বিরুপ প্রভাবে জীববৈচিত্রের সংখ্যা কমতে থাকে। পর্যাপ্ত খাদ্য ও সুস্থ প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে আসায় এখন উল্লুকসহ অন্যান্য প্রাণির বংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে করোনা কারণে দীর্ঘ সময় পর্যটক না থাকায় তাদের বংশ বিস্তারে সহায়ক হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনায় পর্যটক আনাগোন না থাকায় লাউয়াছড়ার আসল রূপ বৈচিত্র ফিরে এসেছে। কয়েকগুণ বেড়েছে জীববৈচিত্র।
লাউয়াছড়া মসজিদের ইমাম ইমরানুজ্জামান জানান, চার বছর ধরে এখানে ইমামতি করি। আগে কখনো এভাবে লাউয়াছড়ায় এত পশুপাখি দেখিনি। সকাল বিকাল খুব বেশি উল্লুক, বানর, হরিণ ও হনুমান দেখা যায়।
মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হাতেম আলী বলেন, করোনার কারণে পর্যটক আনাগোনা না থাকায় লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র স্বর্গসুখে রয়েছে। দ্বিগুণ হচ্ছে বংশবিস্তার। আমার ৫৭ বছর বয়সে এত হরিণ, মাথায় ঝুঁটি মাতুরা, বন মোরগ, শুকর, বানর, চশমাপড়া হনুমান ও উল্লুক দেখিনি।
বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, লাউয়াছড়ায় অনেক ধরনের জীববৈচিত্রের বসবাস। সকাল-বিকাল রাস্তায় বের হলেই উল্লুক, হরিণ ও বানর দেখা যায়। প্রাকৃতিকভাবে পশুপাখির খাবারও বেড়েছে। নিরব পরিবেশে পশুপাখিরা ভলো থাকে।
মৌলভীবাজার সহকারী বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, করোনার প্রভাবে লাউয়াছড়ায় পর্যটক বন্ধ থাকায় পশুপাখি অনেক বেড়েছে। লাউয়াছড়ার বাঘ মারা নামক স্থানে প্রায়ই হরিণ দেখা যায়। হরিণ খোলা মাঠে কঁচিঘাস খেতে আসে। আগে যেসব প্রাণির দেখা পাওয়া যেত না, এখন সেগুলোরও দেখা মিলে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ১০২ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে লাউয়াছড়ায়। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এখানে বন্যপ্রাণিরা আরামে জীবনযাপন করতে পারে। তাদের টিকিয়ে রাখতে হলে কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জাতীয় উদ্যোন লাউয়াছড়ায় করোনার সময়ে পর্যটক আসা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া উদ্যানের বেশিরভাগ গাছে প্রচুর ফল এসেছে। পর্যাপ্ত খাদ্য থাকায় সানন্দে আছে জীববৈচিত্র। একশ দুই প্রজাতির গাছ আছে যে গাছগুলো ফল দেয়। উল্লুক, বানর, হরিণ, হনুমান এসব ফল খাচ্ছে আর নিবিঘ্নে চলাফেরা কছে। এ জন্য তাদের প্রজনন বাড়ছে। পর্যটক বন্ধ থাকলে জীববৈচিত্র ব্যপক বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে জুন থেকে আগস্ট এ তিন মাসে যেমন বৃক্ষ সমৃদ্ধি হয় তেমনি জীববৈচিত্রের বংশবৃদ্ধি হয়।
নদী বন্দর / পিকে