বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। পাট বাংলাদেশের প্রধান একটি অর্থকরী ফসল। দেশে ও বিদেশে পাটের চাহিদা ব্যাপক। পাট থেকে বিভিন্ন রকমের পণ্য উৎপন্ন করা হয়। এগুলো রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
এক সময় পাট ও পাটজাত দ্রব্যই ছিল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস। স্বাধীনতার পর প্রথম বছর বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের শতকরা ৮৪ ভাগেরও বেশি অর্জিত হয়েছিল পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে। পাটকে সোনালি আঁশও বলা হয়ে থাকে।
সোনালি আঁশ খ্যাত বাংলাদেশের পাট বিশ্বসেরা। এ পাটের চাহিদা, গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। পাট উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় এবং কাঁচা পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা যায় যে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৯১ কোটি (৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে দেশ। এর মধ্যে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার ডলার এসেছে পাট ও পাট পণ্য থেকে।
বাংলাদেশে দেশি, তোষা ও মেসতা এই তিন জাতের পাটের চাষ হয়। দেশি পাটের আঁশ সাদা, তোষা পাটের আঁশ লালচে এবং মেসতা পাটের আঁশ অপেক্ষাকৃত মোটা হয়ে থাকে।
পাট চাষের জন্য উষ্ণ জলবায়ু ও প্রচুর বৃষ্টিপাত দরকার হয়। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস পাট বোনার উপযুক্ত সময়। এসময় কৃষকেরা পাট চাষে ব্যস্ত হয়ে পরে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে পাট চাষিরা পাটগাছ কেটে ছোট ছোট করে আঁটি বাঁধে রাখে। আঁটিগুলো কিছুদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় যাকে পাট জাগ দেয়া বলে।
পাটের আঁশ পচে নরম হলে তা ছাড়ানো হয়। এরপর আঁশ ধুয়ে রোদে শুকানো হয়। সেই আঁশকেই বলা হয় পাট। পাটের ভেতরের কাঠিকে পাটকাঠি বলা হয়।
পাট থেকে রশি, সুতা, বস্তা, কাপড়, কার্পেট ইত্যাদি তৈরি করা হয়। পাটকাঠি জ্বালানি হিসেবে এবং বেড়া ও কাগজ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। পাট দ্বারা কৃত্রিম রেয়ন তৈরি করা হয়। ২০১৭ সালে পলিথিন ব্যাগ এর বিকল্পে পাট থেকে উৎপন্ন সোনালি ব্যাগ বা পাটের পলিথিন ব্যাগ বানানোর পরিকল্পনা নেন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি)। শিগগিরই এ ব্যাগ বাজারজাত করবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তাই বলা যায় যে, পাট বাংলাদেশের এক প্রধান অর্থকরী ফসল। পাটের বহুমুখী ব্যবহার ও গবেষণার জন্য কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশের পাট শিল্প আরও বহুগুণ এগিয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করবে।
নদী বন্দর / জিকে