চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার জটের মুখে পড়ছে। ঈদুল আজহার বন্ধ ও দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। পূর্ববর্তী সিডিউল অনুযায়ী প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার আসছে। কিন্তু গার্মেন্টসসহ সব কলকারখানা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দর থেকে খালাস বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রতিদিনই বন্দরের জেটিতে কনটেইনারের স্তুপ হচ্ছে। এতে করে বন্দরের জেটিসমূহে কনটেইনার রাখার স্থান সংকুচিত হয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ছুঁই ছুঁই পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জমা হয়েছে ৪২ হাজার ৫৭১টি। বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার কনটেইনার ধারণ করা সম্ভব। কিন্তু তাতে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড একপ্রকার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক পর্যায়ে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার কনটেইনার থাকে। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্যবাহী কনটেইনার খালাসের গতি তেমন একটা বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই বলে বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ মনে করেন।
গত বছরও দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের এমন অবস্থা হয়েছিল। সে সময় চট্টগ্রাম বন্দর আমদানিকারকদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ঘোষণাসহ কনটেইনার খালাসে কিছু ছাড় দেয়। এমনকি শেষ পর্যায়ে সব ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরের বাইরে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো বা অফডকসমূহে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সাধারণত আমদানি পণ্যের মধ্যে মাত্র ৩৮টি পণ্যবাহী কনটেইনার বেসরকারি ডিপোসমূহে দেওয়া হয়। জাহাজ থেকে নামানোর পর ঐ সব কনটেইনার সরাসরি নির্দিষ্ট অফডকসমূহে চলে যায়। আমদানিকারকগণ অফডক থেকে তাদের কনটেইনার নিজস্ব গন্তব্যে নিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার পূর্ব থেকেই কনটেইনার ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানান, কনটেইনার জট থেকে পরিত্রাণ পেতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দরের পক্ষ থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বন্দরের পক্ষ থেকে অন্তত দুই মাসের জন্য আমদানি পণ্যবাহী সব কনটেইনার অফডকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কনটেইনার গ্রহণে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশ এলাকায় বেসরকারি ১৮টি কনটেইনার ডিপোতে সর্বোচ্চ ৭৭ হাজার পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনার রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত তাদের ডিপোগুলোতে সর্বমোট ৫৪ হাজার কনটেইনার ছিল।
বেসরকারি ডিপো মালিকদের সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান জানান, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার চলে যাবে। সেক্ষেত্রে তাদের ১৮টি ডিপোতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কনটেইনার রাখা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে বন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সব ধরনের কনটেইনার গ্রহণে তারা প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরো জানান, শুধু কনটেইনার জমা করলেই হবে না, ক্রমান্বয়ে খালাস প্রক্রিয়া দ্রুত করার পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় একটা সময় বন্দর ও বেসরকারি ডিপোতেও কনটেইনার রাখা সম্ভব হবে না।
নদী বন্দর / বিএফ