ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের রাঙামুলারকান্দি গ্রামের তরমুজ চাষি বোরহান মাহমুদ। অসময়ে তরমুজ চাষ করে বেশ সফলতাও পেয়েছেন।
তিনি ইউটিউব থেকে কৃষি ফসলের ভিডিও দেখতে গিয়ে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ’ বিষয়ে জানতে পারেন। পরে ভিডিও দেখে ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ আবাদ চাষ করার উদ্যোগ নেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তার জমিতে ছোট ছোট মাচায় ঝুলছে কালো রঙের নানান আকৃতির তরমুজ। মালয়েশিয়া ফেরত যুবক বোরহানের তরমুজ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সারা ফেলেছে। তরমুজ খেতে ও দেখতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে তার বাগানে ছুটে আসছেন লোকজন।
শুধু দেখতে নয়, বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তরমুজ কিনতেও ছুটে আসছেন। জমি থেকেই বিক্রি করছেন সেই তরমুজ। পাইকারিভাবেও তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
দেশে সচরাচর গ্রীষ্মকালে তরমুজের ব্যাপক আবাদ হলেও দেশে প্রথমবারের মতো বর্ষাকালীন সময়ে তরমুজের আবাদ করে আশানুরূপ সাফল্য পেয়েছেন নবীন তরমুজ চাষি বোরহান মাহমুদ। অসময়ে তরমুজের ফলন দেখে খুশি গ্রামাবাসী।
সঠিক পরিচর্যা ও দেখভালের কারণে ভালো ফলন হওয়ায় অধীক লাভবান তিনি। বোরহান ব্যাপক আকারে তরমুজের চাষাবাদ করতে সহযোগীতা চান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের।
নবীন তরমুজ চাষি বোরহান মাহমুদ জানান, দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকার পর বছর দুই আগে দেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার পর বিভিন্ন ব্যবসার কথা চিন্তা করেন। কিন্তু কোনো ব্যবসায়ই তার মনমতো হচ্ছিল না। সিদ্ধান্ত নিলেন কৃষিকাজের।
গতানুগতিক কোনো কৃষি আবাদে না গিয়ে ভিন্ন ধরনের কিছু করার চিন্তা করলেন বোরহান। ইউটিউব থেকে কৃষি ফসলের ভিডিও দেখতে গিয়ে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ’ বিষয়ে জানতে পারেন। ভিডিওটি দেখে সিদ্ধান্ত নেন ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ আবাদ করার।
নিজেদের ২ বিঘা পতিত জমিতে রোপণ করেন বীজ। সেই বীজ থেকে চারা হলে তৈরি করেন মাচা। সেই মাচায় এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে বোরহানের স্বপ্নের ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ।
সেই তরমুজগুলো যাতে কোনো পোকা কেটে দিতে না পারে সেজন্য ক্ষেতজুড়ে ‘আলোক ফাঁদ’ বসিয়েছেন। তরমুজগুলো ঢেকে দিয়েছেন নেটের ব্যাগ দিয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা শান্ত, মনজুর হোসেন তুষারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষিত বেকার যুবক জানান, স্বল্প সময়ে ফলন পাওয়া এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় বোরহানের দেখাদেখি তারাও এ তরমুজ আবাদে ঝুঁকেছেন।
করোনাকালে চাকরির কথা না ভেবে তারা তরমুজ আবাদ করার জন্য বোরহানের কাছে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছেন।
বোরহান জানান, তার জমিতে এখন প্রায় চার হাজার বিভিন্ন সাইজের তরমুজ রয়েছে। প্রতিদিনই ক্ষেত থেকেই বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। প্রতিটি তরমুজ একশ টাকা থেকে শুরু করে তিনশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে।
জমি তৈরিসহ দুই বিঘা জমিতে আমার সর্বমোট খরচ হয়েছে আশি হাজার টাকা। আর জমিতে থাকা তরমুজগুলো আশা করি বিক্রি করতে পারবো চার লাখ টাকার উপরে। সব খরচ বাদ দিয়ে সে তিন লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বোরহান।
স্থানীয় দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন মুশা জানান, শখের বসে বোরহান এ তরমুজের আবাদ শুরু করে। বর্তমানে সে তরমুজের আবাদ করে বেশ লাভবান।
ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ খেতে প্রচুর মিষ্টি। উপরিভাগ কালো হলেও ভেতরে টকটকে লাল। অসময়ে তরমুজ আবাদ করে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন বোরহান।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. হজরত আলী বলেন, বেকারত্ব দূর করতে তরমুজ চাষ বেশ লাভজনক কাজ।
বেকার যুবকদের তরমুজ চাষে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তরমুজ চাষে ফরিদপুরের শিক্ষিত বেকার-যুবকরা এগিয়ে এলে প্রশিক্ষণসহ সরকারি সব সুবিধা ও সব ধরনের সহযোগীতা করা হবে।
নদী বন্দর / বিএফ