লকডাউনের মধ্যে হঠাৎ করেই রফতানিমুখী কলকারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তকে ‘পুরোপুরি আত্মঘাতী’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (১ আগস্ট) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, আপনারা আজকের পত্রিকাগুলোতে দেখেছেন কী ভয়াবহ অবস্থা? কী রকম তুঘলকি কারবার- আগে বলা হলো যে, কারখানা খোলা হবে না, ৫ তারিখ পর্যন্তই বন্ধ থাকবে। আবার হঠাৎ করেই বলা হলো কলকারখানা খোলা হবে। কী করে লোকগুলো আসবে তার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার দেখা যাচ্ছে, রাত্রিবেলা বলছে যে, না, দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন খোলা থাকবে।
‘আমি কি এমনি বলেছিলাম যে, এগুলো আসছে সব হেমায়েতপুর থেকে। আসলেই তো! সব হেমায়েতপুরের অবস্থা। এটা বদ্ধ উন্মাদনা ছাড়া আমি কিছু দেখতে পাই না। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে যে, অযোগ্যতা, দুর্নীতিপরায়ণতা এবং আন্তরিকতার চরম অভাবে এসব আত্মহননকারী সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করছে। দিস ইজ টোটালি সুইসাইডাল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের পত্রিকা দেখে তো আপনার সন্ত্রস্ত হয়ে যেতে হয়। যেভাবে মানুষ আসছে একেবারে গাদাগাদি করে, ঘাড়ের ওপর, ঘাড়ের ওপরে চড়ে এবং সেভাবে এসে কীভাবে…। একবার তাদের ছুটি দিল সব চলে গেল। আবার ফিরছে তারা মফস্কল থেকে। এখন তো মফস্বলেই সংক্রমণ সবচেয়ে বেড়েছে। ওগুলো নিয়ে তারা আবার ফিরে আসছে। সো উই আন্ডারস্ট্যান্ড কী হতে যাচ্ছে ঢাকায়। আমরা মনে করি, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চরম ব্যর্থতার জন্য সকল দায়-দায়িত্ব নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, সরকারেরে অপরিকল্পিত লকডাউনে জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বিএনপি অনেকবার বলেছে যে, দিন আনে দিন খায় মানুষ, প্রান্তিক মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, মাঝি, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিকসহ সকল প্রকার নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা ব্যতীত লকডাউন কখনই কার্য্কর হবে না। সেই জন্যই বিএনপি এসব মানুষকে এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব করেছিল। সরকার সেদিকে না গিয়ে দলীয় লোকদের আড়াই হাজার টাকা করে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকৃত দুর্গত মানুষের কাছে এই সহযোগিতা পৌঁছাচ্ছে না।
‘উপরন্তু হঠাৎ করে রফতানিমুখী কলকারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে কল-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা আরও মারাত্মক ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছে। একদিকে গণপরিবহন বন্ধ অন্যদিকে কারখানায় কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশে তারা হতবিহ্বল হয়ে উঠেছে এবং চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রায় সব বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। ঢাকার বাইরে এই শ্রমিকরা এবং ঢাকার জনগণ ডেল্টা ভেরিয়েন্টের ভয়াবহ সংক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ডা. রফিকুল ইসলাম, তাইফুল ইসলাম টিপু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (ড্যাব) অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও অধ্যাপক আব্দুস সালাম প্রমুখ।