শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে ভাঙন থাকায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পরেছেন। ভাঙন অব্যাহত থাকায় সোমবার (২ আগস্ট) পূর্ববর্তী এক সপ্তাহে ৮০টি পরিবার তাদের বসত বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। ভাঙনে ৩০০ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভাঙন রোধের দাবিতে ও নদীর তীর রক্ষা বাঁধের দাবিতে রঞ্জন ছৈয়ালকান্দি গ্রামে সোমবার সকালে মানববন্ধন করেছেন গ্রামবাসী।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে স্রোতে বেড়েছে। স্রোতের কারণে জাজিরার পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে জাজিরার বড়কান্দি, পালেরচর, পূর্ব-নাওডোবা, কুন্ডেরচর ও জাজিরা ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ৮০টি পরিবার তাদের বসত বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। ওই এলাকার অন্তত ৩০০ একর ফসলি জমি পদ্মায় বিলিন হয়েছে।
কিন্তু ভাঙন রয়েছে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। আর জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে পাঁচশ মিটার এলাকায়। যার কারণে ওই এলাকা গুলোর মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক রয়েছে।
ভাঙন রোধ ও বাঁধ নির্মাণের দাবিতে রবিবার (১ আগস্ট) মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বড়কান্দি ইউনিয়নের রঞ্জন ছৈয়ালকান্দি গ্রামে। রঞ্জন ছৈয়াল কান্দি গ্রামের নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন ভাঙন কবলিত গ্রামবাসীরা।
৭০ বছর বয়সী শুকুরজান বিবির বসত বাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিতে রবিবার নদীর তীরে আসেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর একাই বাড়িতে থাকতাম। শ্বশুর আর স্বামীর কবরসহ বাড়িটি পদ্মায় গ্রাস করেছে। শেষ জীবনে আশ্রয়হীন হলাম। মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। নিঃস্ব আমি মৃত্যুর পরে আর নিজের ভিটায় মাটি পাবনা।
রঞ্জন ছৈয়ালকান্দি গ্রামের চাঁন মিয়া সিকদারের (৮০) বসত ঘর ও বাড়ির অংশ বিলীন হয় গত ২৪ জুলাই। চোখের সামনে নদীতে বাড়ি বিলীন হওয়া দেখে স্ত্রী সবুরজান বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সন্তানরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
চাঁন মিয়া সিকদার বলেন, বসত ঘরের জমি ও তিন বিঘা ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। চোখের সামনে নিঃস্ব হওয়ার দৃশ্য দেখে স্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাসায়ী।
শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, পদ্মার ভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের তালিকা প্রস্তুত করার কাজ চলছে। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। আপাতত ভাঙন রোধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। আর পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা থেকে নড়িয়া পর্যন্ত তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাউবোর শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জাজিরার কয়েকটি এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। ভাঙন রোধে জাজিরার পাথালিয়া কান্দি, পৈলান মোল্যা কান্দি, বড়কান্দি ও বাবুরচর এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছি। ওই স্থান গুলোতে ৭২ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এ ছাড়া পূর্ব নাওডোবার জিরো পয়েন্ট থেকে বিলাসপুর পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ২৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে।
নদী বন্দর / সিএফ