অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের বিচ্ছেদ সম্পন্ন হলো। ফলে এই দম্পতির দীর্ঘ ২৭ বছরের সংসার জীবনের ইতি ঘটল। বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয়ার তিন মাসের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হলেন তারা। এর আগে গত ৩ মে তারা বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।
ওয়াশিংটনের কিং কাউন্টি সুপিরিয়র কোর্টের এক আইনজীবী তাদের ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর করেন। তবে বিচ্ছেদের পর তার কেউই নাম পরিবর্তনের জন্য আদালতে আবেদন করেননি বলে জানা গেছে। বিচ্ছেদের চুক্তি অনুযায়ী, তাদের নিজেদের সম্পত্তি ভাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এর আগে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিতে গিয়ে বিল-মেলিন্ডা বলেন, আমরা যুগল হিসেবে আর পথ চলতে পারবো বলে আমাদের মনে হয় না। নিজেদের সম্পর্কের ওপর অনেক নিরীক্ষা ও চিন্তাভাবনার পর আমরা আমাদের সংসারের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে মেলিন্ডা বিল গেটসের মাইক্রোসফট কোম্পানিতে যোগ দিলে দুজনের পরিচয় হয়। পরে তারা প্রণয়ে জড়ান, সেই প্রণয় ১৯৯৪ সালে গড়ায় পরিণয়ে। তাদের এ ২৭ বছরের দীর্ঘ সংসারে ঘর আলো করে আসে তিন সন্তান।
এই যুগল দাতব্য সংস্থা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’র যৌথ পরিচালক। সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই এবং শিশুদের টিকার আওতায় আনতে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে আসছে।
প্রভাবশালী সাময়িকী ফোর্বসের বিচারে, বিল গেটস এখন বিশ্বের চতুর্থতম সম্পদশালী ব্যক্তি। বিল-মেলিন্ডার বিচ্ছেদের খবর সামনে আসতেই বেশ কিছু গণমাধ্যম তাদের এই বিচ্ছেদের পেছনে বিল গেটসের প্রাক্তন প্রেমিকা অ্যান উইনব্ল্যাডকেই দায়ী করে আসছে।
এর আগে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মেলিন্ডাকে বিয়ের পরেও প্রায় প্রতি বছরই নর্থ ক্যারোলিনার বীচে প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন বিল গেটস। ১৯৯৪ সালে মেলিন্ডাকে বিয়ে করেন তিনি। সে সময়ই নাকি প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে সময় কাটানোর বিষয়ে মেলিন্ডার সঙ্গে বিল গেটসের অদ্ভূত এক চুক্তি হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে নিজেই টাইম ম্যাগাজিনকে এ বিষয়টি পরিষ্কার করেন বিল গেটস।
এমনকি মেলিন্ডাকে বিয়ে করবেন কিনা সে বিষয়েও নাকি তিনি উইনব্ল্যাডের মতামত চেয়েছিলেন। এক সাক্ষাতকারে বিল গেটস বলেন, যখন আমি মেলিন্ডাকে বিয়ে করার কথা ভাবছিলাম তখন আমি উইনব্ল্যাডের মতামত জানতে চেয়েছিলাম। সে সময় মেলিন্ডাকে বিয়ের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিল উইনব্ল্যাড।
এ বিষয়ে আগের স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে উইনব্ল্যাড বলেন, আমি তাকে (বিল) বলেছিলাম সে (মেলিন্ডা) তোমার জন্য উপযুক্ত কারণ সে বেশ বুদ্ধিদীপ্ত একজন মানুষ।
এই দম্পতির বিচ্ছেদের খবরে অনেকেই হতবাক হয়ে গেছেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে কখনও বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়নি। বিভিন্ন সময় হাসি-খুশি ভাবেই এই দম্পতিকে এক সঙ্গে দেখা গেছে।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি ডলারের মালিক বিল গেটস। বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি তিনি। এই সম্পত্তির মধ্যে আবার মেলিন্ডারও অংশ রয়েছে। বিল গেটস নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারিভাবে সবচেয়ে বেশি কৃষিজমির মালিক। তার মালিকানায় রয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার একর কৃষিজমি। তবে দেশটির ১৮টি অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে থাকা এসব কৃষিজমিতে যৌথ মালিকানা রয়েছে মেলিন্ডারও। এর মধ্যে লুইজিয়ানায় ৬৯ হাজার ৭১ একর, আরকানসাসে ৪৭ হাজার ৯২৭ একর ও নেব্রাস্কায় ২০ হাজার ৫৮৮ একর কৃষিজমি রয়েছে।
এদিকে যৌথভাবে বিল এবং মেলিন্ডার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। যৌথ সম্পত্তি ছাড়াও তাদের নিজস্ব আলাদা সম্পত্তিও রয়েছে। তবে শুধুমাত্র যৌথ সম্পত্তিই দুজনে ভাগ করে নেবেন। বিল এবং মেলিন্ডার পরিচিতজনরা বলছেন, বিচ্ছেদের পর এই বিশাল পরিমাণ সম্পত্তি দুজনের মধ্যে ভাগ করা মোটেই সহজ নয়। তাই বিল গেটসের সঙ্গে বিচ্ছেদের আপস-রফা হিসেবে মেলিন্ডা কী পাবেন, সে বিষয়ে চলছে জল্পনা।
নদী বন্দর / সিএফ