নোয়াখালীর দ্বীপ ভাসানচরের পথে যাত্রা শুরু করেছে রোহিঙ্গাবাহী জাহাজ। দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজে করে এক হাজার ১৩৪ জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নৌবাহিনীর জেটি থেকে প্রথম জাহাজটি ছেড়ে যায়। এরপর ধাপে ধাপে আরো ৪টি জাহাজ ভাসানচরের পথে ছেড়ে যায়।
এর আগে সোমবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসে করে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। রাতে তাদের রাখা হয় বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে।
আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, ভাসানচরের সুযোগ সুবিধা নিয়ে প্রথম যাত্রায় রোহিঙ্গাদের অনেক বোঝাতে হয়েছিল। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে এবার নিজেরাই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। গত ৪ ডিসেম্বর যাদের আত্মীয়-স্বজন ভাসানচরে গেছেন তাদের কাছে সুযোগ-সুবিধার খবর শুনে অনেকেই সেখানে যেতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের তালিকাভুক্ত (রেজিস্টার) ক্যাম্প ছাড়া বাকি সব ক্যাম্প থেকেই এবার রোহিঙ্গারা ভাসানচর যাচ্ছেন। উখিয়ার কুতুপালং-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৮ ডব্লিউ ক্যাম্প থেকেও যাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার। উখিয়ার কুতুপালং-৪ নম্বর ক্যাম্প থেকে ২৭ ও কুতুপালং-২ ডব্লিউ থেকে ২৪টি পরিবার ভাসানচরে যাচ্ছে।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাগরের মাঝে ভেসে থাকা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে। বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার। তারা ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হন। তারা ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। দুবছর আগে সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তাদের অনিচ্ছার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে এর যাত্রা শুরু হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করছেন।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এক হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গা ভাসানচরে গেছেন। তারও আগে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে সমুদ্র উপকূলে আটক আরও তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সেখানে নিয়ে রাখা হয়।
ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের অনেকে জানান, তারা ভাসানচর পরিদর্শন শেষে ফিরে আসা রোহিঙ্গা নেতাদের মুখে সেখানকার বর্ণনা শুনে এবং প্রথম ধাপে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দেয়া অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সেখানে যেতে রাজি হয়েছেন। তাদের মতে, পাহাড়ের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাসের চেয়ে ভাসানচর অনেক নিরাপদ হবে। এছাড়া ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নির্মিত অবকাঠামো অনেক বেশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গারা।
কোনো বলপ্রয়োগ ছাড়াই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাওয়ার ইতিবাচক মনোভাব দেখে তাদের সেখানে পাঠানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় সরকার। রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে নিরাপদে ভাসানচরে পাঠাতে পারায় আরও অনেক পরিবার সেখানে যেতে আগ্রহী হচ্ছে বলে মনে করছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক দায়িত্বশীল সূত্র।
নদী বন্দর / জিকে