চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ তথা বিআরআই প্রকল্প ঘিরে বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব দেশে ‘দুর্বল সরকার ও চীনা বিনিয়োগের আধিপত্য’ রয়েছে, সেখানে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টারের (বিএইচআরআরসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। খবর আল-জাজিরার।
লন্ডনভিত্তিক সংগঠনটি বিশ্বজুড়ে ১০ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পর্যবেক্ষণ করে বুধবার জানিয়েছে, তাদের কাছে আসা হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগের এক-তৃতীয়াংশের উৎস দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। এ অঞ্চলের মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এ তালিকায় নাম রয়েছে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশেরও; যেমন- পেরু ও ইকুয়েডের।
বিএইচআরআরসির প্রতিবেদন অনুসারে, বিদেশে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট অন্তত ৬৭৯টি ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে মিয়ানমার থেকে (৯৭টি)। এরপর লাওস থেকে ৩৯টি, কম্বোডিয়া থেকে ৩৪ ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছে ২৫টি অভিযোগ। এগুলোর মধ্যে অনেক ঘটনাতেই ধাতু, খনি, জীবাশ্ম জ্বালানি ও নির্মাণ খাতে চীনের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ জড়িত।
বিআরআই কী?
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ হচ্ছে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বহুজাতিক ও বহুবার্ষিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা। বিশ্বজুড়ে চীনের বিনিয়োগ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৩ সালে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করেন তিনি। সরকারি হিসাব বলছে, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালে বিভিন্ন দেশে চীনের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) নয় হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
চীনের বিআরআই প্রকল্পের আওতায় অনেক উন্নয়নশীল দেশই বিপুল পরিমাণে মহামূল্যবান বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছে, যার হাত ধরে সেসব জায়গায় অবকাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি ঘটছে। তবে সমালোচকদের অভিযোগ, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক সময় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে নেয়া হচ্ছে না, এমনকি পরিবেশগত ঝুঁকির বিষয়েও লুকোচুরি করা হচ্ছে। তাছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তো রয়েছেই।
বিএইচআরআরসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশে চীনের ব্যবসা থেকে অনেকক্ষেত্রে ইতিবাচক বিকাশ ঘটছে। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের একটি ‘দায়িত্বশীল মহান শক্তি’ হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা ক্ষুণ্ন হতে পারে।
মিয়ানমারে শত কোটি ডলারের প্রকল্প
মিয়ানমারে চীনের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ‘উচ্চ ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিএইচআরআরসি। সংগঠনটির দাবি, গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের অনেক আগে থেকেই মিয়ানমারে চীনা প্রকল্প ঘিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল। অভ্যুত্থানের পর তা আরও বেগবান হয়েছে মাত্র।
গত মে মাসে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ১৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে, যার মধ্যে ২৫০ কোটি ডলারের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। প্রত্যাশিতভাবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)-নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করবে কোনো চীনা প্রতিষ্ঠানই।
প্রতিবেদনে বিএইচআরআরসি বলেছে, ভবিষ্যতে চীনা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত আরও অনেক প্রকল্পের অনুমোদন দিতে পারে মিয়ানমার জান্তা। এর মধ্যে অনেকগুলোই নতুন বিতর্ক ও জনতার উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্টরা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলে, যথাযথ অভিযোগের ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এড়ানো সম্ভব হতে পারে। সেক্ষেত্রে আইনের সমর্থন, যথাযথ নির্দেশনা এবং সেগুলো কার্যকরে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
নদী বন্দর / জিকে